উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ, কী হতে পারে?


শেখ রিফাদ মাহমুদ প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৫, ২০২২, ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ /
উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ, কী হতে পারে?
উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ, কী হতে পারে?

২০১৩ সালের পরে আবারো আন্দোলন সংগ্রামে জোর দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল –  বিএনপি। মাঝে মাঝে ঝিমিয়ে কর্মসূচি পালিত হলেও এবার বেশ জোরেশোরেই মাঠে নেমেছে তারা। তৃণমুল পর্যায় থেকে দলটির চেয়ারপার্সন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দ্রব্য মূল্যের অর্ধগতির প্রতিবাদে বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন শেষে এখন বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করছে তারা। ইতিমধ্যে প্রায় অধিকাংশ বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রাণসঞ্চারের বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। সড়কপথে পরিবহণ ধর্মঘট থাকলেও সমাবেশের দুই-তিনদিন আগে থেকেই সভাস্থলে ভর জমাতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। সাথে রান্না-বান্নার প্রয়োজনীয় উপকরণও রাখে। একটি মুহুর্তও যেনো ছত্রভঙ্গ না হয়, সেজন্য খাবার-দাবারের বন্দোবস্তো নিজেরাই সভাস্থলে করে রাখছে। যা রাজনৈতিক মাঠে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে।

বিএনপি’র সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বিগত কয়েকদিনের বক্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট তারা তাদের দাবি আদায়ে অটল। যেনো তারা আঁটঘাঁট বেঁধেই এবার রাজপথে নেমেছে। মামলা-হামলা, গ্রেফতারে ভয় না পেয়ে মাঠের আন্দোলনেই তারা স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠান্ডা মেজাজের রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও তিনিও উত্তপ্ত বক্তব্য অব্যাহত রেখেছেন। নেতাকর্মীদের সাহস সঞ্চার করতে কেন্দ্রীয় নেতারা বেশ জোর দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সে আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।  প্রথম দিকে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও বর্তমানে আন্দোলন ভিন্নপথে যাচ্ছে যা সহজেই অনুমেয়। বর্তমান সময়ে আন্দোলনে বেশ কজন নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটেছে, যা আন্দোলনকে আরোও গতিশীল করেছে। নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশ তৎক্ষনাৎ বিক্ষোভ মিছিলের মতো কর্মসূচি নিমিষেই বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা বিগত দুইবছর আগেও সেভাবে সম্ভব ছিলোনা।

ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও রাজপথে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। সম্প্রতি যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সারাদেশ হতে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আগমন ঘটিয়ে তাদের শক্তির প্রমাণ দিচ্ছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থানে আওয়ামীলীগের সম্মেলনে জনসমাগম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো নেতারা বিভিন্ন সময়ে বক্তব্যে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সাবধানতার কথাও বলছে। সবমিলিয়ে তারাও বিএনপি’র আন্দোলনকে রুখে দিতে প্রস্তুত এ বিষয়টি স্পষ্টভাবেই বোঝাচ্ছে।

হঠাতই বিএনপি’র ঘুরে দাঁড়ানোয় সবাই বিস্মিত। মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে আত্ম কোন্দল থাকলেও বর্তমানে সবকিছু ছাপিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিই যেনো মূখ্য। নেতাকর্মীদের চোখেমুখেও যেনো আত্মপ্রত্যয়ের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জনবান্ধব বিষয়গুলোর ওপর কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি জনসমর্থন পাচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা নিয়ে কর্মসূচি থাকায় একদম সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা খুব ভালোভাবেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি’র ২০১৮সালের নির্বাচন নিয়ে হাস্যরসের সুরে কটাক্ষ মূলক বক্তব্যে আওয়ামী লীগ’কে বেশ অস্বস্তিতে পোহাতে হয়েছে। ঠিক সেই মুহুর্তে বিএনপি’র নেতারা তাদের বক্তব্যে জাপানি রাষ্ট্রদূতের উদ্ধৃতি টেনে বিভিন্ন মুখরোচক কথা বলায় ঘটনাটি বেশ আলোচিত হয়েছে। যার বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরালও হয়েছিলো। 

সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভের বিষয়টি জনমনে বেশ প্রভাব ফেলেছে। অতীতে এমন আলোচনা না হলেও প্রায়শই রিজার্ভ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের বক্তব্যে বলছেন, রিজার্ভের অর্থ ব্যবহারে সরকার অনেক সাশ্রয়ী এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে, এর মাধ্যমে দেশের মুদ্রা সাশ্রয় করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে যে রিজার্ভ, তা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনন্য উচ্চতায় রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি’র নেতারা সমাবেশ ও গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বলছেন, চুরি, অপব্যবহার ও লুটপাটের কারণে রিজার্ভের অর্থ কমে বর্তমানে দেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ জনগণের কপালে চিন্তার ভাঁজ খুব ভালোভাবেই খেয়াল করা যায়। এ বিষয়গুলো বিএনপি’র কর্মসূচিগুলোতে বিশেষভাবে স্থান পাচ্ছে, যা প্রতিনিয়তই সরকারকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলছে। 

আগামী ১০ডিসেম্বর বিএনপি’র ঢাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে পরস্পরবিরোধী কথা শোনা যাচ্ছে। একদিকে বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কঠোর বার্তা। বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন সময়ে বলছেন আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। এতোদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি রোধ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি’র আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচী থাকলেও ১০ডিসেম্বরের পর থেকে বর্তমান সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা আসবে বলে মনে ধারণা করা যাচ্ছে। বিএনপি নেতাদের দেওয়া বক্তব্যে স্পষ্টত ধরে নেওয়াই যাচ্ছে সেদিন বিএনপি’র পক্ষ হতে চলমান আন্দোলনের একটি চূড়ান্ত রূপরেখা আসবে। তবে বিএনপি’র উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্যে বলছেন ১০ ডিসেম্বর বিএনপির আন্দোলনের পতন ঘণ্টা বাজবে। সবকিছু মিলিয়ে ধারণা করা যায় ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হতে যাচ্ছে।

শেখ রিফাদ মাহমুদ
উপদেষ্টা পর্ষদ সদস্য, গ্লোবাল স্টুডেন্ট ফোরাম।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com