বিদেশি মিশন থেকে চাকরিচ্যুত নেতা রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের হোতা!


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় : মে ১১, ২০২৩, ৩:১২ অপরাহ্ণ /
বিদেশি মিশন থেকে চাকরিচ্যুত নেতা রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের হোতা!
বিদেশি মিশন থেকে চাকরিচ্যুত নেতা রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের হোতা!

রাজশাহীতে অবস্থিত একটি বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশন থেকে পদের অপব্যবহার ও অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতার দায়ে চাকরিচ্যুত এক ব্যক্তিকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরির মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তার নাম অরবিন্দ দত্ত বাপ্পী। নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে তিনি সম্প্রতি অতি মাত্রায় সক্রিয়।

সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অরবিন্দ দত্ত ২০১২ সালে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে তাকে দপ্তর সম্পাদক করা হয়। পরবর্তীতে তিনি নিজের রাজনৈতিক পদ গোপন করে ২০১৭ সালে রাজশাহীতে অবস্থিত একটি বিদেশি কূটনৈতিক মিশনে লোকাল স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পান।

সূত্র মতে, নিয়োগের পর থেকেই বাপ্পী স্থানীয় ভিসা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সংশ্লিষ্ট দেশের সাধারণ ভিসাপ্রার্থীদের জিম্মি করে উক্ত সিন্ডিকেট বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়, যার মূল হাতিয়ার ছিলো এই অরবিন্দ বাপ্পী। এখানেই শেষ নয়, কূটনৈতিক মিশনের নাম ব্যবহার করে তিনি জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় পর্যায়ের টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) নিয়োগে বাপ্পী প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রী ও এক শ্যালককে চাকরি পাইয়ে দেয়। এছাড়া রুয়েটের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের সিন্ডিকেটের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। কূটনৈতিক মিশনের নাম ভাঙিয়ে নানা পর্যায়ের ব্যক্তিকে সুবিধা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে সে এতোটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে নিজের অফিসের ঊর্ধ্বতনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য বাইরে প্রচার করতে শুরু করে। ২০২১ সালে অরবিন্দ দত্তের এইসব অপকর্ম ফাঁস হলে তাকে সেখান থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

এরপর থেকে অরবিন্দ আবার রাজনীততে ফেরার চেষ্টা করে। সম্প্রতি রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনিও অংশ নিতে শুরু করেন। কিন্তু এখানেও তিনি সমস্যা তৈরি করেন। লিটনের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করতে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ ফোরামের মধ্যে ভাঙন ধরানোর অপচেষ্টার মূল কারিগর তিনি। আবার যুবলীগের মধ্যেও ভাঙন ধরানোর জন্য নানা চক্রান্ত চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। আবার শুরু থেকে লিটনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের বেশ কিছু বলিষ্ঠ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও তিনি চক্রান্ত করছেন। মেয়র লিটনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর এক বুদ্ধিজীবীকে নিয়েও বাপ্পীর নেতৃত্বে চলছে অপপ্রচার। তার এসব অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট সুধী সমাজের প্রতিনিধিরা। এমন বিতর্কিত এক ব্যক্তি আওয়ামী লীগের প্রার্থী লিটনের নির্বাচনী মিডিয়া সেলের দায়িত্ব নিয়ে পুরো সেলটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বলে মনে করেন তারা। তাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের মধ্যেও বিভক্তি ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, বন্ধুপ্রতীম একটি রাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে। উপরন্তু এরকম ব্যক্তিকে পাশে রেখে রাজনীতিতে বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে অরবিন্দ দত্ত বাপ্পী’র মুঠোফোনে একাধিক নম্বর থেকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com