ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন আটাব সদস্য কল্যাণ ঐক্য জোটের নেতাকর্মীরা। আজ রবিবার (২৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পর তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের আইন ও ২০২১ সালের সংশোধনী পরিবর্তন করে যে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে, তা কার্যকর হলে প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন এবং পুরো খাতসহ জাতীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তারা আশঙ্কা করেন।
আটাব সদস্য কল্যাণ ঐক্য জোটের আহ্বায়ক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন টিপু মানববন্ধনে বলেন, ‘নতুন অধ্যাদেশে যে সব সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে, তার অনেকগুলো বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিশেষ করে ধারা ৫–এ অন্য এজেন্সির কাছ থেকে টিকিট ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করলে সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সিগুলো টিকে থাকতে পারবে না। দেশে যে পাঁচ হাজার এজেন্সি আছে, তাদের অধিকাংশেরই এয়ারলাইন্স থেকে সরাসরি টিকিট ইস্যুর সক্ষমতা নেই। আর অনলাইন ও অফলাইনের জন্য যে ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা জামানত রাখার কথা বলা হয়েছে, তা ছোট এজেন্সিগুলোর পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, অধ্যাদেশের ধারা ৯–এ পরিবারের বাইরে ব্যবসা হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা, এক ঠিকানায় রিক্রটিং এজেন্টের কার্যক্রম সীমিত করা এবং বিনা শুনানিতে লাইসেন্স স্থগিত করার মতো বিধানগুলো খাতটিকে অকার্যকর করে দেবে। তিনি যোগ করেন, ‘দেশের প্রচলিত আইনেই একই ঠিকানায় একাধিক ব্যবসার লাইসেন্স বৈধ। বহু রিক্রুটিং ও হজ এজেন্সি দীর্ঘদিন ধরে টিকিট সেবা দেওয়ার জন্য একই অফিস থেকে ট্রাভেল ব্যবসা পরিচালনা করছে।’
সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ জুমান চৌধুরী বলেন, ‘এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, পরিবারের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক গ্যারান্টি সীমিত থাকার কারণে তারা বড় এজেন্সি থেকে টিকিট সংগ্রহ করে গ্রাহকদের সেবা দেন। এটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানানো হলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও জানান, ২০২১ সালের আইনে নির্ধারিত শাস্তি সংসদীয় যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পাস হয়েছিল। সেটিকে হঠাৎ করে তিন বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব অযৌক্তিক। তাঁর ভাষায়, ‘যেকোনো অপরাধের বিচার দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই সম্ভব। আলাদা করে অতিরিক্ত কঠোর শাস্তির প্রয়োজন নেই।’
বক্তারা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে যেকোনো খাতে অধ্যাদেশ জারি হলে তা সাধারণত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে আলোচনা করে আইন সংশোধন করাই হবে অধিক গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক পথ।
পাঁচ হাজার নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ভবিষ্যৎ বিবেচনায় অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবি জানান বক্তারা। মানববন্ধন শেষে আহ্বায়ক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে আটাব সদস্য কল্যাণ ঐক্য জোটের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়।
স্মারকলিপিতে ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ২০২৫ (সংশোধন)–এর অনুমোদিত খসড়া বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ হয়ে যাবে, মালিক-অফিসার-কর্মচারীরা কর্মহীন হবেন এবং পুরো খাত মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। স্মারকলিপিতে আরও তুলে ধরা হয়—অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারা ও উপধারার অসঙ্গতি, অযৌক্তিক আর্থিক শর্ত, অন্য এজেন্সির কাছ থেকে টিকিট ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ, লাইসেন্স হস্তান্তর সীমাবদ্ধতা, রিক্রুটিং এজেন্টদের অফিস পরিচালনায় বাধা এবং অতিরিক্ত শাস্তির প্রস্তাবসহ নানা উদ্বেগ।
প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানায়—গেজেট প্রকাশের আগেই অনুমোদিত খসড়া বাতিল করে খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।
