
স্টাফ রিপোর্টার
নগরীর আলোচিত-সমালোচিত, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসায়ী ও অবৈধ অস্ত্রধারী শওকত হোসেন ওরফে কালা শওকতের সম্রাজ্য চলছে এখনো বহাল তবিয়তে। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অবৈধ টাকার কুমির শওকত গা ঢাকা দিলেও তার সকল কার্যক্রম চলছে আগেরই মত। নিজস্ব লোকজন দিয়ে মাদক ব্যবসা, বিল্ডিং নির্মাণের কাজ চলছে বহাল তবিয়তে। অনেকের দাবি প্রশাসনসহ বিভিন্নমহল অবৈধ টাকায় ম্যানেজ করে অনেকটা নির্বিঘ্নে কাজগুলো পরিচালনা করছেন। খুলনার “গণভবন” খ্যাত শেখ বাড়ির আর্শিবাদ নিয়ে এই শওকত নগরীতে চাঁদাবাজি, জমি-বাড়ি দখল, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতেন বহাল তবিয়তে। এক সময়ের নুন আনতে পান্তা ফুরায় দর্জি পিতার পরিবারে জন্ম নেয়া শওকত শেখ সোহেলের আর্শিবাদে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন খুব অল্প সময়ে। আত্মগোপনে থাকা শওকতের বিরুদ্ধে ইত:মধ্যে একাধিক মামলার হয়েছে কেএমপির বিভিন্ন থানায়। শুধু শওকতই নয় তার ভাই শেখ সোহেল এর অর্শিবাদ নিয়ে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। পেট্রোল পাম্প দখল, সন্ধ্যা বাজারের সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। জানা গেছে পলাতক জীবন যাপন করলেও পশ্চিম বানিয়া খামারের একটি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষককের কাছে মোটাংকের চাঁদার দাবি করেছেন অন্যথায় তাকে চাকুরি করতে দিবেন না বলে হুমকি দিচ্ছেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানাগেছে, ২০১৪ সালে ৩৩ হাজার মেট্রিক টন গম আত্মসাৎ, টেন্ডার চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এবং অবৈধ অস্ত্রের জোরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেন মহানগরীর ২৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শওকত হোসেন ওরফে কালা শওকত ও তার ভাই রিপন। বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে পশ্চিম বানিয়াখামার এলাকায় দুইটি একতলা বাড়ি, একটি চারতলা বাড়ি, বটিয়াঘাটা উপজেলাধীন হেতালবুনিয়া এলাকায় ২০ বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়ি, মাহজামিল মিন্টু নামে দুইটি কার্গো জাহাজ, দুইটি প্রাইভেটকার, একটি জীব গাড়ি নং (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৩-৯৮৬০), ঢাকাস্থ বনানী মিরপুর গুলশান এলাকায় তিনটি ফ্লাট এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাতকাটা কাটা জমি ক্রয় করেছেন তারা। ২০১৪ সালের ০৫ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান মেরিটস ফায়ার এন্ড মেরিন ইন্সুরেন্স কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারকে বিনামূল্যে ৩৩ হাজার মেট্রিক টন গম (যা ওই সময়ের বাজার মূল্য ৯০ কোটি টাকা) প্রদান করে। উক্ত গম শওকাত হোসেন ওরফে কালা শওকাত মালিকানাধীন শিপিং এজেন্ট ও তার গুদাম চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে খালাসের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে উক্ত গম খালাস এর ব্যাপারে উচ্চ আদালতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে শওকাত হোসেন ওরফে কালা শওকাত সুকৌশলে উক্ত গম বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। দৈনিক পত্রিকা প্রথমআলো ২০১৭ সালের ০৮ আগস্ট শওকতের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
শওকাত হোসেন ওরফে কালা শওকাত গত ২০০৯ সালে খুলনা মহানগরীর ২৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব গ্রহণের পরবর্তী সময়ে তিনি স্থানীয় এলাকায় মাদক ব্যবসায়, টেন্ডার বাজি, চাঁদাবাজি এবং চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা থেকে খুলনার ডুমুরিয়া দিয়ে ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য খুলনা মহানগরীতে আমদানি করে খুলনা শেরেবাংলা রোড রাজিব বাজার বিপরীত পাশে এলাকায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান খুলে তার পিছনে রাতে মদ, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের আসর বসাতেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ সোহেল এর নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, গণপূর্ত বিভাগ, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করার অনেক অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। গোয়েন্দা সুত্রের দাবি শওকত বাহিনীর কাছে ০৪টি বন্দুক এবং পিস্তলসহ প্রায় ১০টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এছাড়া শওকাতের আপন মেজো ভাই কালা রিপন ময়লাপোতা মোড়ে সন্ধ্যাবাজারের বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি জোরপূর্বক দোকান দখল করে সে বর্তমান ০৮টি দোকান ও পাওয়ার হাউজ মোড় এলাকায় খান পেট্রোল পাম্প এর মালিক হয়েছে। তিনিও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ সোহেল এর প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বাড়ি, জমি দখলসহ বিভিন্ন প্রকার অসামাজিক কাজে লিপ্ত রয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। শওকাতের বড় ভাই মোরশেদ আহমেদ টুটুল ২০১৫ সালের ২৫ জুন শেখ সোহেল এর মাধ্যমে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। ইতিপূর্বে তিনি গত ১৯৯৭ সাল হতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং বিএনপি’র সকল রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয় কর্মী হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়া তিনি ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে জানা যায়। আওয়ামি লীগে যোগদানের পর থেকে তিনি টেন্ডারবাজি, জবরদখল, চাঁদাবাজি শুরু করে অতি দ্রুত বিত্তশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন। এ ব্যাপারে শওকত ওরফে কালা শওকতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।