অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ শুরু


বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ণ /
অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ শুরু
অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ শুরু

অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালে পঞ্চমবারের মতো দুই সপ্তাহ ব্যাপী চক্ষু প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণের মূল বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে ছানি, গ্লুকোমা, রেটিনা, অকুলোপ্লাস্টি এবং কর্নিয়ার রোগের চিকিৎসা।

থাকবে নিউরো অফথালমোলজি ওয়ার্কশপ, অপটোমেট্রি ওয়েবিনার, নার্সিং এবং বায়োমেডিক্যাল সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ।

রোববার (১৭ নভেম্বর) নগরের পাহাড়তলীর চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইমরান সেমিনার হলে প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণ এবং চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (সিইআইটিসি) সহযোগিতায় বাংলাদেশে ১১তম সফরে এসেছে বিশেষায়িত এ হাসপাতালটি। এ প্রকল্পে সহায়তা করেছে অ্যালকন কেয়ারস, অ্যালকন ফাউন্ডেশন, ফেডেক্স, অফথালমোলোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওএসবি), বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস) এবং ন্যাশনাল আই কেয়ার।

মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামে চোখের চিকিৎসায় এই প্রতিষ্ঠান অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। অরবিস প্রযুক্তি বিনিময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

গত ২২ বছর ধরে তারা বাংলাদেশে আসছে। মানবতার সেবায় অবদান রেখে চলেছে। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই আমি ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন করেছি মেমন হাসপাতালে। একটি কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার সেথানে করতে চেষ্টা করছি। যাতে দরিদ্র রোগীরা এই সেবা পেতে পারে। শহর অনেক বড়, কিন্তু কোনো পার্ক আমরা শিশু কিশোরদের জন্য করতে পারিনি। মানুষের নিশ্বাস নেবার কোনো জায়গা নেই। বিপ্লব উদ্যানটি পার্কে ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছি ইতিমধ্যে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনে কাজ করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে আরবান ডিসপেনসারি করতে চাই। সিটি করপোরেশনের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে জেনারেল হাসপাতালে পরিণত করতে চাই যাতে মানুষ সেবা নিতে পারে। ওয়েস্ট প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট করা জরুরি। যাতে পরিচ্ছন্ন নগর গড়া যায়। আবর্জনা থেকে জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব। আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। সেটা করতে পারলে ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি করতে পারব।

সিআইআইটিসির প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী চক্ষু চিকিৎসা সেবাকারি প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ২৫ বছর আগ থেকে কাজ শুরু করেছে। অরবিস বাংলাদেশে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্সদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিব ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকার পাশাপাশি সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। আমি আশা করবো অরবিস যেন তাদের মানবসম্পদ তৈরি ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম অব্যহত রাখেন।

আন্তর্জাতিক চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন বলেন, অরবিসের চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জনবল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আজকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শিশুদের চিকিৎসায় উন্নত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিশুদের চোখের চিকিৎসায় প্রশিক্ষণে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের প্রায় ১৪টি হাসপাতালে নতুন ডিপার্টমেন্টেরে মাধ্যমে সম্প্রসারিত হয়েছে। যার ফলে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য চিকিৎসক, নার্সরা প্রশিক্ষণ নিতে আসেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনুষ্ঠান উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মনিরুজ্জমান ওসমানী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডেরেক হডকি। তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সিইআইটিসির সহযোগিতায় বাংলাদেশে উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল প্রকল্প আবার শুরু করতে পেরে গর্বিত। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের চোখের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অ্যালকন কেয়ার্স, অ্যালকন ফাউন্ডেশন এবং ফেডেক্সের সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। অরবিসের লক্ষ্য একটি শক্তিশালী এবং টেকসই চোখের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

বক্তব্য দেন অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ, অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের ডিরেক্টর মরিস গ্যারি, সিইআইটিসির মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. রাজিব হোসেন এবং বাংলাদেশে ফ্লাইং আই হসপিটাল প্রজেক্ট কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ডা. মো. মুনিরুজ্জামান ওসমানী।

এর আগে সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর আবু সাঈদ মেহ্বুব খান। বক্তব্য দেন শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চট্টগ্রামের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর।

বাংলাদেশে চক্ষু সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য এটি অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের একাদশ অবতরণ। প্রথমবার ১৯৮৫ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নার্স এবং টেকনিশিয়ানরা প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ফ্লাইং আই হসপিটাল এবং অরবিসের পার্টনার হাসপাতাল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।

আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞদের জন্য অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের ভেতরে প্রশিক্ষণ দেবে, যা বিশ্বের একমাত্র সম্পূর্ণ স্বীকৃত বিমানভিত্তিক চক্ষু শিক্ষাদান হসপিটাল। অরবিসের ক্লিনিক্যাল স্টাফ এবং স্বেচ্ছাসেবক বিশেষজ্ঞরা (ভলান্টিয়ার ফ্যাকাল্টি) সারা দেশ থেকে আসা চক্ষু বিশেষজ্ঞদের হাতে-কলমে সার্জারি ও রোগী সেবা প্রশিক্ষণ দেবেন। এর পাশাপাশি সিমুলেশন প্রশিক্ষণ ও চক্ষু কর্মশালার আয়োজন করা হবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য স্থানীয় চক্ষু সেবাদাতাদের দক্ষতা বাড়ানো এবং বাংলাদেশে চক্ষু স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।