আমরা গাছ লাগাবো, গাছই জীবনকে বাঁচিয়ে রাখবে জামালপুরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এই প্রতিপাদ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেছেন, মরুকরণ রোধ করতে হলে অবশ্যই গাছ লাগাতে হবে।

এই গাছ যেমন একদিকে শস্য বা ফসল, ফল, ফুল উৎপাদন করবে। ঠিক একইভাবে গাছ প্রকৃতিতে অক্সিজেন দিবে। প্রকৃতি উত্তপ্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সেই তাপকে শোষণ করে প্রকৃতিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখবে। এজন্যই আমরা গাছ লাগাবো। এই গাছই আমাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখবে।

আজ বুধবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে জামালপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও বৃক্ষরোপণ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন। জামালপুর পুলিশ লাইন্সে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন

ডিআইজি আরও বলেন, পরিবেশ ও তার অন্যতম প্রধান উপজীব্য হচ্ছে বৃক্ষরাজি। বৃক্ষ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে সূর্যের আলোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজের খাদ্য উৎপাদন করে এবং সে বাতাসে অক্সিজেন বিলায়। এর থেকে জীবন-উপকারী অন্যকিছু কিন্তু মানুষের জন্য নেই। অন্য প্রাণির জন্যও নেই। অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণকে অর্থমূল্যে বিচার করলে গুণে শেষ করা যাবে না।

অতিমারি করোনার সময় একটু নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য মানুষের হাসফাস দেখেছি। অর্থবিত্তে বিপুল বৈভবের মালিক এমন অনেক ব্যক্তিকে শুধুমাত্র একটু নিঃশ্বাসের জন্য অনেক টাকা ব্যয় করেও তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারেননি। অথচ সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতি থেকে সেই অক্সিজেন গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। এই অক্সিজেনের পেছনে সবচেয়ে বড় যে ভূমিকা সেটা হলো এই পরিবেশের। যার অন্যতম উৎস হচ্ছে এই বৃক্ষরাজি। এই বৃক্ষের উৎপাদিত অক্সিজেন থেকেই আমাদের জীবনটা বেঁচে যায়।

তিনি বলেন, বৃক্ষ শুধু অক্সিজেনই দেয় না। আমরা জানি পাকা ভবন তাপ শোষণ করতে পারে না। চরে বালুর মধ্যে যদি ঘাস না থাকে সেখানে কিন্তু প্রচণ্ড গরম হয়। অসহনীয় একটি পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু এই যে মাঠের ঘাসগুলো কিন্তু তাপ শোষণ করে নেয়। বৃক্ষ পরিবেশকে মরুকরণের বিকাশকে বিরত রাখে এবং মাটিতে জলের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে স্বাস্থ্যকর জমি উপহার দেয়। পৃথিবীতে উত্তপ্ত হওয়ার পরিস্থিতি মানুষ তৈরি করেছে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করার কারণে।

ব্যাপকভাবে বন ধ্বংস করে অথবা ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে আমরা কিন্তু বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অট্টালিকা বা বিভিন্ন পাকা ঘরবাড়ি তৈরি করছি। এতে করে সূর্যের প্রখর তাপ শোষণ করার মতো উদ্ভিদ বা গাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে

ডিআইজি আবিদ হোসেন বলেন, প্রকৃতি কিন্তু মানুষের জন্য কখনোই শত্রু নয়। কিন্তু প্রকৃতিকে নষ্ট করার যে সমস্ত কর্মকাণ্ড রয়েছে। গাছকাটা বন্ধ বা প্রকৃতির ক্ষতি করার জন্য প্লাস্টিক দ্রব্যাদি যদি কম ব্যবহার করি। তাহলে প্রকৃতি আরও সহনীয় পরিবেশ উপহার দিতে পারে। আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এই শিশুদের হাত ধরে উন্নত বাংলাদেশে পরিণত হবো। এই পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আগামী প্রজন্মকে প্রকৃতি ধ্বংস করার বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদেরকে ধারণা দিতে হবে।

কিভাবে পরিবেশ বাঁচিয়ে সামনের দিনে জীবনমানকে আরও উন্নত করতে পারি সেই শিক্ষা তাদেরকে দিতে হবে। পরিবেশ দূষণ না করে পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থেকে পরিবেশের উন্নয়নে সবাইকে মনোনিবেশ করার অনুরোধ জানান তিনি।

জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বেসরকারি সংস্থা বুরো বাংলাদেশ এর মধুপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার বসাক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহেল মাহমুদ।

পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি। একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে একটি সুন্দর পরিবেশ দরকার। সেই পরিবেশ সবুজ হতে হবে। অক্সিজেন ভরপুর একটি পরিবেশ থাকতে হবে। যদি একটি পরিবেশবান্ধব সমাজ না গড়ে তুলতে পারি। তাহলে ২০৪১ সালের যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সেই স্বপ্ন কিন্তু বাস্তবায়ন হবে না।

আজকের শিশুরাই সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। একটি করে যদি গাছ লাগাই, সারাদেশে যদি ১৮ কোটি মানুষ যদি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেই, তাহলে প্রধানমন্ত্রী যে আন্দোলন শুরু করেছেন সেটি কিন্তু সার্থক হবে। জামালপুর জেলা পুলিশ এক সপ্তাহের মধ্যে ফলজ, বনজ ও ওষধি জাতের ১০ হাজার গাছের চারা লাগাবো। পাঁচ হাজার গাছ দিয়ে সহায়তা করেছেন বুরো বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য এ বছরের মধ্যে জামালপুরে যেন এক লাখ গাছ লাগাতে পারি।

আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা তিন শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি করে গাছের চারা বিতরণ করে জেলা পুলিশের বৃক্ষরোপণ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি পুলিশ লাইন্স প্রাঙ্গণে একটি আমলকি গাছের চারা রোপণ করেন। পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান রোপণ করেন একটি হরিতকি গাছের চারা। গাছের চারা রোপণের পর ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ মোনাজাতে অংশ করেন।

Share This Article