
পাড়ায় পাড়ায় দলবেঁধে নারীদের প্রচারণা আর সড়কে মাইকের প্রচারণা। সমানতালে চলছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। শেষ মুহুর্তে কোন প্রার্থী কত বেশি ভোটারের কাছে পৌঁছাতে পারেন যেন তারই প্রতিযোগিতা চলছে। সবমিলিয়ে প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী কর্মীদের প্রচারণায় উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার আসন্ন নির্বাচনী পরিবেশ।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহর, গ্রাম-সর্বত্রই একই আলোচনা নির্বাচনে কী হবে? কিন্তু কোনো উত্তর কেউ দিচ্ছেন না। কোনো আগাম মন্তব্যও যেন করতে পারছেননা সাধারণ ভোটাররা। তাদের কাছ থেকে একটা কথা কমন শোনা যাচ্ছে। তা হলো, ‘নির্বাচনে কে জিতবে তা বলা যাচ্ছে না।’
আগামী ৫ জুন আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নয়জন প্রার্থী থাকলেও একজন প্রার্থী নির্বাচনের প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী ঘরানার। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকার কারণে প্রার্থীরাও আশাবাদী হয়ে বিপুলভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। শহর থেকে গ্রাম-প্রতিটি এলাকায় প্রতিদিন একাধিক পথসভা, গণসমাবেশ ও উঠান বৈঠকের পাশাপাশি ভোটারদের সাথে সাক্ষাৎ করছেন। দিচ্ছেন নিজেদের প্রতীক সম্বলিত লিফলেট।
এদিকে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে মানুষের মধ্যে সম্ভাব্য বিজয়ী কে হতে পারেন তা নিয়ে বাড়ছে কৌতুহল। কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই এখানে প্রশ্নকর্তা। সবারই একটাই জিজ্ঞাসা, কে হচ্ছেন চেয়ারম্যান? সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, চাকুরিজীবী থেকে ব্যবসায়ী, মুচি থেকে ভ্যান চালক, সেলুনকর্মী থেকে মাছ বিক্রেতা; যার কাছেই নির্বাচন নিয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে সেখান থেকেই আসছে পাল্টা প্রশ্ন ‘বুঝছি না।’ কোন হিসেবই যেন মেলাতে পারছেন না কেউ।
অটোভ্যান চালক জহুরুল হকের প্রশ্ন, ‘ভাই হচ্ছে কি? এতো দেখছি মহা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। কিডা যে পাশ করবেনে, তা বোঝা যাচ্ছে না।’
মাছ বিক্রেতা সদানন্দ বিশ্বাস এক প্রকার রায়-ই দিয়ে দিলেন ‘যেই জিতুক, সহজে জিততে পারবে নানে। একেবারে দম বের হয়ে যাবেনে।’ নির্বাচনে জয়তো কঠিনভাবেই আসে জানালে সদানন্দ উত্তর দেন, ‘তা না। এবার যেসব প্রার্থী হয়েছে আর ভেতরে ভেতরে যা হচ্ছে তাই নিয়ে বলছিলাম।’ কি হচ্ছে ভেতরে ভেতরে সে বিষয়ে অবশ্য কোনো ব্যাখ্যা তার নেই। তবে সদানন্দের ধারণা অনেক কিছু হচ্ছে গোপনে, যা বোঝা যাচ্ছে না। অর্থাৎ বাইরে উৎসব থাকলেও ভেতরে গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলেই তার মতো সাধারণ ভোটারদেরও অভিমত। এই গুমোট কি নিয়ে সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
তবে যেটার আভাস পাওয়া গেছে তা হলো নেতাদের মতো ভোটাররাও নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন। যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দু’একজন পরস্পরবিরোধী বলয়ের হলেও অধিকাংশই একই বলয় থেকে আসা। সে কারণে প্রকাশ্যে কে যোগ্য আর কে অযোগ্য, কার নির্বাচনে জয়ের পাল্লা ভারী আর কার অবস্থা খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না সেদিকে যেতে চাচ্ছেন না কেউ-ই। ভেতরে ভেতরে কোনো প্রার্থীর পক্ষে টান থাকলেও প্রকাশ্যে তা মুখে নিতে দেখা যাচ্ছে না সাধারণ ভোটারদেরকে। শুধু কর্মী ও তার সমর্থকেরা-ই নিজেদের প্রার্থীদের জন্যে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন।