ইভটিজিং প্রতিরোধ ও আইনী অধিকার

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

ইভটিজিং কি?

‘ইভ টিজিং’ শব্দের ‘ইভ’ অর্থ নারী, টিজিং মানে উত্যক্ত বা বিরক্ত করা৷ সহজভাষায় বলা যায়, ইভ টিজিং মানে, নারীদের উত্যক্ত করা৷ ব্যক্তির আচরন ও আদর্শগত বৈশিষ্ট্যের নাম চরিত্র।সূক্ষ্মভাবে দেখলে মানুষের চরিত্র  দুই ধরনের ও বিপরীত বৈশিষ্ট্যের। কেউ সচ্চরিত্রের অধিকারী এবং কেউ দুশ্চরিত্রের অধিকারী। সমাজের এই দুশ্চরিত্রের লোকদের যৌন সংক্রান্ত অবাঞ্ছিত আবদারই যৌন হয়রানি বা নিপীড়ন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সাধারণত মেয়েরাই যৌন হয়রানি বা নিপীড়নের স্বীকার বেশি হয়ে থাকে।কোন নারী বা কিশোরীকে তার স্বাভাবিক চলাফেরা বা কাজকর্ম করা অবস্থায় অশালীন মন্তব্য করা,ভয় দেখানো,বিকৃত নামে ডাকা,কোন কিছু ছুঁড়ে দেওয়া,অহেতুক হাস্যরসের উদ্রেক করা, রাস্তায় হাটতে বাঁধা দেওয়া,অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা,ইঙ্গিতপূর্ন ইশারা করা,সিগারেটের ধোঁয়া গায়ে দেওয়া,উদ্দেশ্যমূলকভাবে পিছু নেয়া,অশ্লীলভাবে প্রেম নিবেদন করা,প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদি ইভটিজিং এর মধ্যে পড়ে।

যেভাবে ঘটে থাকে

এটি মূলত রাস্তা ঘাট, বাসে,জনসাধারনের সামনে,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে নারীরা যৌন হয়রানি বা উত্যক্তের শিকার হয়ে থাকেন। বখাটেদের যৌন হয়রানির আড়ালে লুকিয়ে থাকা যৌন লালসার ক্ষত সামাজিক দৃষ্টিতে কিংবা জনসাধারনের চোখে খুব স্পষ্টভাবে ধরা পড়েনা।কেবল ভুক্তভোগীই বোঝেন এর অন্তর্নীহিত বেদনা।আজকাল আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে মানুষ বিভিন্ন পর্ণ বা নীল ছবি অবাধে দেখে। যার ফলশ্রুতিতে অনেকে নিজেকে সামলাতে না পেরে যখন যেকোন অবস্থায় নারী দেহ দেখে হায়নার মত ঝাপিয়ে পড়ে।হউক সে ২ বছরের শিশু বা ৬০ বছরের বৃদ্ধা। উদাহরনস্বরুপ বলা যেতে পারে কুমিল্লার তনু ও ফেনীর নুসরাতের ধর্ষন ও হত্যার ঘটনা। নারীরা বেশী নির্যাতিত হন পাবলিক বাসে ও ভীড়ের মধ্যে। গত বছরে  (২০২১) পাবলিক বাসে চড়ে ৪১ শতাংশ নারীই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেক সময় ঘর থেকেও এই নির্যাতন নিপিড়নের সূচনা হয়ে থাকে।আমরা বাঙালী সহজ সরল আর বাঙালী সংস্কৃতি অনুযায়ী বিয়ে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বোন জামাই,বেয়াই বা কাজিনরা একটু আজেবাজে কটুক্তি করবে বা গায়ে হাত দিয়ে কথা বলবে এটা যেন স্বাভাবিক বিষয়।সংগত কারনে ঘর থেকেই আমাদের সতর্ক হতে হবে।

নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(WHO) রিপোর্ট বলছে বিশ্বের প্রায় এক -তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নারী জীবনের যে কোন সময় ধর্ষনের শিকার হয়ে থাকেন।প্রতিনিয়ত যৌন নিপিড়ন একের পর এক ধর্ষন,যৌন আক্রমনের ঘটনায় মানুষ আতঙ্কিত।এ ধরনের উত্যক্ততা স্বাধীনভাবে ও নিরাপদে পথ চলার মত মৌলিক অধিকারের উপর সরাসরি  আঘাত হানে। 

ইভটিজিং এর স্বীকার হলে করনীয় কি?

যৌন নিপীড়ন সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ এবং এর আইন সম্পর্কে আমরা জানিনা বিধায় প্রতিনিয়ত আমরা নির্যাতিত হচ্ছি। কেউ ইভটিজিং এর স্বীকার হলে বা এমন কোন ঘটনা দেখা গেলে প্রথমে নিকটস্থ থানায় গিয়ে দ্রুত বিষয়টি পুলিশকে অবগত করতে হবে।সেটা সম্ভব না হলে ৯৯৯-এ কল করা যেতে পারে।থানায় লিখিত অভিযোগও করা যেতে পারে। অবশ্য পুলিশ নিজে বাদী হয়েও মামলা করতে পারে। যদি কোন কারনে থানায় অভিযোগ না নেয় তাহলে সরাসরি আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অথবা আশেপাশে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হলে ভ্রাম্যমান আদালতকে সঙ্গে সঙ্গে অবগত করা যেতে পারে। তাৎক্ষনিকভাবেই ভ্রাম্যমান আদালত প্রমান পান তাহলে ঘটনাস্থলেই শাস্তি আরোপ করতে পারবেন তবে মনে রাখতে হবে নিরীহ কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করলে কিন্তু ফল উল্টো হতে পারে। তাছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার,সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে স্বশরীরে হাজির হয়ে লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ দাখিল করা যেতে পারে।

প্রচলিত আইনে ইভটিজিং এর শাস্তি

বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে ইভটিজিং এর শাস্তির বিধান আছে। এই জঘন্য অপরাধের শাস্তির বর্ননা হচ্ছে, দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৫০৯ ধারায় ইভটিজিং সম্পর্কে বলা হয়েছে।এই ধারা অনুযায়ী কেউ যদি এই অপরাধ করে এবং তা প্রমানিত হয়  তবে সেই ব্যক্তি ১ বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডেই দন্ডিত হতে পারেন। একই আইনের ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর শালীনতা নষ্ট করার অভিপ্রায়ে বা শালীনতা নষ্ট হতে পারে জেনেও তাকে আক্রমন করে তাহলে সে ব্যক্তি ২  বৎসর মেয়াদে যে কোন বর্ননার কারাদন্ডে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবে।

ইভটিজিং প্রতিরোধে করনীয়

সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাসরুম ও বিভিন্ন কর্মস্থলে ইভটিজিং সম্পর্কে আলোচনা করা এবং এর নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরা। ইভটিজিংকে উৎসাহিত করে এধরনের বক্তব্য,বিজ্ঞাপন বা নাটক প্রচার না করতে পারে এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই বিষয়ে তৎপর এবং কার্যকরী ভুমিকায় এগিয়ে আসতে হবে। কেননা ইভটিজিং এক প্রকার যৌনহয়রানি।

যৌন হয়রানি নিপিড়ন বন্ধ করি, প্রতিরোধে আওয়াজ তুলি, নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলি।

 লেখক- এস.এম. নুর ইসলাম, শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

Share This Article