
মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিরত রাখতে উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন আইন প্রণেতারা। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই এই প্রস্তাব পেশ করা হয়, যার লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো।
জিও নিউজ জানিয়েছে, এমন সময়ে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান, বিশেষ করে এফ-১৬, এফ-২২ ও এফ-৩৩ মোতায়েন করছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব যুদ্ধবিমান ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করবে।
সম্প্রতি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ইসরায়েল দেশটিতে হামলা শুরু করে। তাদের আকস্মিক আক্রমণে ইরানের সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা এবং এর শীর্ষস্থানীয় পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন। এই হামলায় ইরানে ২২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে, যার ফলে ইসরায়েলে ২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানায়, ইসরায়েল গত কয়েক দিনে ওয়াশিংটনকে তেহরানের বিরুদ্ধে যৌথ সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে এমন কোনও পদক্ষেপে যেতে রাজি নয়।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। প্রতিনিধি পরিষদের কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি (রিপাবলিকান, কেনটাকি) একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবনায় প্রেসিডেন্টকে আইন প্রণেতাদের দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন যেকোনো আক্রমণ ‘সমাপ্ত’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিনেটে ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর টিম কেইন অনুরূপ একটি বিল উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার একমাত্র কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। তিনি আরও যোগ করেন, এই মুহূর্তে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।
সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ইসরায়েলের এই হামলাকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তার ভাষ্য, কংগ্রেসের স্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া কোনো দেশের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ গ্রহণযোগ্য নয়।
সিনেটর র্যান্ড পল সতর্ক করে বলেন, এই যুদ্ধ আমেরিকার নয়। আরেক প্রতিনিধি ম্যাসি সরাসরি বলেন, এটি আমাদের যুদ্ধ নয়। কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর বলেছেন, আমেরিকানদের কেউ আক্রমণ করছে না বা করেনি। আমেরিকানদের যুদ্ধে টেনে আনা এবং ইসরায়েলকে আবারও আমেরিকাকে তাদের পছন্দের যুদ্ধে জড়িত করতে দেওয়া বন্ধ করার সময় এসেছে।আমেরিকানদের আরেকটি প্রজন্মকে একটি ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়িয়ে দেবেন না।