
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য মডেল মসজিদে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস.আর.এন. ইয়াকুব এন্টারপ্রাইজ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাজ সম্পূর্ণ না করেই নিম্নমানের নির্মাণ শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মুসল্লিদের।
সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এই মসজিদটি ধর্মীয় শিক্ষা, গবেষণা ও কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে নির্মিত হচ্ছে। তবে নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এখনো পুরো কাজ শেষ হয়নি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় মার্বেল বসানোর কথা থাকলেও শুধু দ্বিতীয় তলায় দেওয়া হয়েছে। বাকি অংশে টাইলস বসানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, প্রধান গেইট, পুকুর সংস্কার ও অতিরিক্ত অজুখানা নির্মাণ ছাড়াই কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।
২০২৪ সালের ১৭ জুন ঢালাই কাজে লোহার পাতের পরিবর্তে কাঠের তক্তা ব্যবহার করায় নিচতলার আটটি গ্রেড বিম ধসে পড়ে। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। কিছুদিন পর পুনরায় কাজ শুরু হয়।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মসজিদটিতে গ্রাউন্ড ফ্লোরে গাড়ি পার্কিং, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার ও প্রতিবন্ধীদের নামাজের কক্ষ থাকবে। দ্বিতীয় তলায় প্রধান নামাজ কক্ষ ও কনফারেন্স রুম, তৃতীয় তলায় পুরুষ ও নারীদের পৃথক নামাজের স্থান, রিসার্চ সেন্টার, মক্তব ও ইসলামিক লাইব্রেরি, আর চতুর্থ তলায় কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র, তাহফিজ সেন্টার ও ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসন থাকবে।
যদিও প্রকল্পের নাম মেসার্স এস.আর.এন. ইয়াকুব এন্টারপ্রাইজের, বাস্তবে কাজটি করছেন দেলোয়ার হোসেন মিন্টু নামে এক ঠিকাদার। মুঠোফোনে তিনি বলেন, “বাজেট অনুযায়ী কাজ করছি। অতিরিক্ত অজুখানা, গেইট, ট্রান্সফরমার, পুকুর সংস্কার ও জেনারেটর বিষয় পরে দেখা হবে।” এরপর তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
স্থানীয় মুসল্লি ইউসুফ আলী বলেন, “মডেল মসজিদের কাজ মানসম্মতভাবে হচ্ছে না। সরকার যেভাবে পরিকল্পনা করেছে, সেভাবেই কাজ শেষ হওয়া দরকার।”
আরেক মুসল্লি মোহাম্মদ জহিরের অভিযোগ, “মসজিদটি এলাকার গর্ব। কিন্তু নিম্নমানের কাজের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চলছে। আমরা তদন্ত চাই।”
হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনজুর আলম বলেন, “কাজের মান অত্যন্ত নিম্ন। ঢালাই ও গাঁথনির মান ভালো নয়। আমি বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগে ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, গেইট, পুকুর সংস্কার এবং সব তলায় মার্বেল নিশ্চিত করতে হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “গণপূর্ত বিভাগ এই মসজিদের দায়িত্বে রয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লিখিতভাবে জানালে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কক্সবাজার গণপূর্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, “মুখের কথায় সরকার কাজ করতে পারে না। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজেট অনুযায়ী শুধু দ্বিতীয় তলায় মার্বেল বসানো হবে, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় টাইলস দেওয়া হবে। পুকুর সংস্কারের বাজেট নেই। তবে ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা থাকবে।”
স্থানীয়দের দাবি, ১৫ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা মেনে নেওয়া যায় না। কাজ শেষের আগে সব ত্রুটি নিরসন ও পরিকল্পনা অনুযায়ী মানসম্মতভাবে মসজিদ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।