এক নিঃশব্দ শিল্পীর শেষ অধ্যায়

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

বুসকেটস: এক নিঃশব্দ শিল্পীর শেষ অধ্যায়

সব বিদায়ই সহজ নয়। বিশেষ করে যখন সেই বিদায় আসে এমন এক শিল্পীর কাছ থেকে, যিনি ফুটবলকে শুধু খেলা নয়, কাব্যের মতো করে বাঁচিয়ে গেছেন। সার্জিও বুসকেটস- যার নাম উচ্চারণ মানেই নিখুঁত ভারসাম্য, খেলার অদৃশ্য ছন্দ আর এক গভীর নিঃশব্দ জাদু। গতকাল শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তিনি ঘোষণা দিলেন, চলতি এমএলএস মৌসুম শেষে তাকে আর দেখা যাবে না ফুটবল মাঠে।
৩৭ বছর বয়সে এসে তিনি জানালেন, প্রায় দুই দশক দীর্ঘ এই যাত্রার ইতি টানার সময় হয়েছে।
২০০৮ সালে বার্সেলোনার জার্সিতে যে তরুণ প্রথমবার মাঠে নামেন, কেউ তখনো কল্পনাও করতে পারেনি, মাঝমাঠের ছায়া হয়ে তিনি পুরো এক প্রজন্মকে আলো দেখাবেন। ৭২২ ম্যাচ, অসংখ্য লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ, কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ আর ক্লাব বিশ্বকাপ; সবই যেন নীরবে গায়ে মেখে নিলেন তিনি। গোলের ঝলকানি নয়, তুমুল করতালিও নয়- বুসকেটস ছিলেন এমন এক স্রষ্টা, যিনি আলো আঁধারের মাঝেই সুর বাজাতেন।
স্পেন জাতীয় দলের হয়ে ২০১০ সালের বিশ্বকাপ আর ২০১২ সালের ইউরো জয়- বুসকেটসের ক্যারিয়ারের আরেক উজ্জ্বল অধ্যায়। জাভি ও ইনিয়েস্তার সঙ্গে তার সেই সোনালি ত্রয়ী আজো বিশ্বফুটবলের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে আছে।
বার্সেলোনার দরজা পেরিয়ে তিনি যখন গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে, তখন পাশে পেলেন পুরনো সঙ্গী লিওনেল মেসি আর জর্দি আলবাকে। ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিয়েই জিতলেন লিগস কাপ, ছুঁলেন সাপোর্টার্স শিল্ড। যেন ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়েও তিনি প্রমাণ করলেন- শিল্পীরা বয়সে নয়, ছন্দেই অমর।
বুসকেটসের নিজের ভাষায় বিদায়, “এখন সময় এসেছে বিদায় বলার। প্রায় ২০ বছর ধরে যে স্বপ্নের গল্পটা আমি বুনে এসেছি, তার শেষ পৃষ্ঠায় পৌঁছেছি। ধন্যবাদ বার্সেলোনা- আমার জীবনের ক্লাব, যে ক্লাবে আমি আমার শৈশবের স্বপ্ন পূরণ করেছি। ধন্যবাদ স্পেন জাতীয় দলকে, ধন্যবাদ ইন্টার মায়ামিকে।”
এখনো অবশ্য একটি শেষ সুযোগ বাকি। এমএলএস প্লে-অফে লড়াইয়ের মঞ্চে নামবে ইন্টার মায়ামি, আর সেখানেই হয়তো শেষবারের মতো দেখা যাবে ফুটবলের এই নীরব কবিকে।
সার্জিও বুসকেটস বিদায় নিচ্ছেন, কিন্তু তার রেখে যাওয়া ছন্দ, তার নিঃশব্দ জাদু ফুটবলের পাতায় রয়ে যাবে চিরকাল।

Share This Article