মাত্র ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পেই আজ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানি ও ভবন ক্ষতিগ্রস্তের ঘটনা ঘটেছে। ভূ-তাত্ত্বিকদের সতর্কবার্তা, একই এলাকায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে, যাতে প্রাণহানির সংখ্যা কয়েক লাখে পৌঁছাতে পারে। বড় ভূমিকম্প আসার আগে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয় এটি তার আগাম বার্তা, এমনটা মনে করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প গবেষক মেহেদি আহমেদ আনসারী।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদীর মাধবদী থেকে উৎপত্তি হওয়া এই ভূমিকম্প প্রায় ২৬ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে জন্ম নেওয়া এই ভূমিকম্পে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের আবাসিক ভবনে ফাটল ধরা, দেবে যাওয়া ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
অধ্যাপক আনসারী বলেন, ঢাকা শহরের প্রায় ২১ লাখ আবাসিক ভবনের মধ্যে ৩৫ শতাংশই ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আজকের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে যত ভবনের ক্ষতি হয়েছে, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে তা অনেকগুণ বেশি হবে।
তিনি জরুরি ভিত্তিতে তিন ধাপে ভবন পরীক্ষার পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন:
সবুজ তালিকা-ঝুঁকিমুক্ত ভবন, হলুদ/কমলা তালিকা- আংশিক ঝুঁকিপূর্ণ, মজবুতকরণ প্রয়োজন, লাল তালিকা- অতি-ঝুঁকিপূর্ণ, তাৎক্ষণিক খালি করতে হবে।
অধ্যাপক আনসারী ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, রাজউককে সকল ভবন মালিককে তাদের ভবন বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুযায়ী কিনা তা পরীক্ষা করতে বলতে হবে। এই পরীক্ষার দায়িত্ব মালিকদেরই নিতে হবে।
ঐতিহাসিক তথ্য উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করেন, বাংলাদেশের চারপাশে গত ১০০-১৫০ বছরে ৬টি বড় ভূমিকম্প হয়েছে। ১৮৯৭ সালের ৮.১ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প না হওয়ায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে।
তিনি আজকের ভূমিকম্পকে ‘পূর্ব সতর্কতামূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে দ্রুত ভবন নিরাপত্তা জরিপ ও প্রস্তুতি সম্পদের আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে রাজউকের মধ্যে সিইজিআইএস ও আইডব্লিউএম-এর মতো প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগকে দ্রুত বাস্তবায়নেরও তাগিদ দেন তিনি।
