সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তদন্ত কমিটি ঘটনার নির্ভুল তদন্তের স্বার্থে কিছু আলামত বিদেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠাতে পারে বলেও জানান তিনি।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে স্থাপিত অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
আজাদ মজুমদার বলেন, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত কমিটির প্রধান জানিয়েছেন— আগামীকাল (সোমবার) তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করবেন। তদন্ত কাজ এই মুহূর্তে সফলভাবে চলমান রয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে তারা প্রয়োজনীয় যাবতীয় আলমত সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে কিছু আলামত দেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ওনারা যদি প্রয়োজন মনে করেন, কিছু আলামত দেশের বাইরে পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে উপপ্রেস সচিব বলেন, উপযুক্ত সময় এলে তদন্তের বিষয়ে কমিটি নিশ্চয়ই বিস্তারিত জানাবেন। ওনারা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের আলামতগুলো সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে কিছু কিছু আলামত ওনারা প্রয়োজন মনে করছ্নে যে, সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের বাইরে থেকে আলামতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে নিঃসন্দেহ হওয়াটা তাদের জন্য সহজতর হবে।
প্রাথমিক প্রতিবেদন মিডিয়াকে অবহিত করা হবে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন এটা নিয়ে কী করবেন সেই বিষয়ে।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বিলম্ব হবে কিনা? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, তাদেরকে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টরা বসে ঠিক করবেন তদন্তটা সম্পন্ন করতে কতদিন সময় লাগবে। এ বিষয়ে এখনই নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ‘বাতিল’ প্রশ্নে উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ঘোষণার প্রেক্ষিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। ভুল বুঝে সচিবালয়ে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞাকে অনেকে ধরণা করেছেন যে, সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিকিডেশন বাতিল করা হয়েছে। বাস্তবে এ তথ্যটি সঠিক নয়। সাংবাদিকদের কোনও অ্যাক্রিকিডেশন কার্ড বাতিল করা হয়নি।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, সচিবালয়ে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি তদন্ত চলমান আছে। এটা এখন ক্রাইম সিন হয়েছে। যে কারণে মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সাংবাদিকদের চলাচলটাও একটু সীমিত করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে— অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও যত সম্ভব দ্রুত সাংবাকিদের আবার সচিবালয়ে নতুন করে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামীকাল সোমবার থেকেই অস্থায়ী পাস নিয়ে সাংবাদিকরা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০০ সাংবাদিককে অস্থায়ী পাস দেওয়ার। সচিবালয়ে বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠনের ১৬০ জনের মতো সদস্য রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ৪০ জন ক্যামেরাম্যানকে অস্থায়ী পাস দেওয়া হবে। এই পাস ছাড়া যদি আর কোনও সাংবাদিক মনে করেন যে, তাদের সচিবালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে, তারা প্রয়োজনমাফিক অস্থায়ী পাস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। এজন্য ডিএমপির একটি সেল গঠন করা হয়েছে। সাধারণ নাগরিকরাও যাদের বিভিন্ন কারণে সচিবালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন, তারাও এই সেল থেকে পাস পাবেন।
তিনি আরও বলেন, কোনও অবস্থাতেই বোঝার অবকাশ নেই যে, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে বিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হয়েছে— সেটা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোনোভাবেই বলা হয়নি যে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটা সঠিক হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন— আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে সচিবালয় ক্রাইম সিন। এটাকে প্রটেক্ট করতে এটা করা হয়েছে। সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই ঘটনা তদন্ত করছে। সচিবালয়ের মতো কেপিআই— এটি দেশের একটি অন্যতম প্রধান সংরক্ষিত এলাকা। এখানে এ ধরনের একটি দুর্ঘটনায় দেশের বড় একটি বিপর্যয় হয়েছে। এখানে তদন্ত চলাকালে সবার থেকে সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, সাংবাদিকরাও আমাদের সহযোগিতা করবেন। এই সহেযাগিতার অংশ হিসেবে খুবই সাময়িক একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এর ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছি, এই সিদ্ধান্তটা সাময়িক। এটা একেবারেই তদন্তের প্রয়োজনে করা হয়েছে। কারণ বেশি মানুষ প্রবেশ করলে আলমতগুলো নষ্ট হতে পারে। আমাদের সঙ্গে আপনারাও একমত হবেন যে, দেশের স্বার্থে এই তদন্তটা সুষ্ঠু হওয়া জরুরি। কারণ এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডগুলো বিদ্যমান আছে বলে জানান উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনও কার্ড বাতিল করা হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন কার্ড ইস্যু করা হবে ততক্ষণ এই কার্ডগুলোর ভ্যলিডিটি থাকবে। আর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই কার্ডগুলো রিভিউ করা হবে। এর কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন সময়ে ৭ হাজার ৮৬৬টি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪ হাজার ৯০০টির মতো গত সরকার বিভিন্ন অজুহাতে বাতিলও করেছে। ২ হাজার ৯০০টির মতো এখন বিদ্যমান আছে। সরকার এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, কারা এই কার্ডগুলো বহন করছেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রকৃত সাংবাদিকদের বাইরেও আরও অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা এই কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয়ে লবিংসহ নানা ধরনের তৎপরতা চালান। অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী আছেন, তাদের কাছে এই কার্ড রয়েছে। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা রিভিউ করে প্রকৃত সাংবাদিকদের নামে কার্ড ইস্যু করার। সাংবাদিকদের বাইরে অন্য কেউ এই কার্ড ব্যবহার করে সাংবাদিকতাকে যেন কলুষিত করতে না পারে। পাশাপাশি সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটা যেন হুমকির মুখে না পড়ে। আমরা ভালো সাংবাদিকতাকে প্রমোট করতে চাই। সাংবাদিক নামধারী অন্য ব্যক্তি যারা সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করে বিষয়ে তাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিস্মারক সংরক্ষণ করবে ঢাবি
শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মুছে ফেলার অভিযোগের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, একটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, ওই গ্রাফিতিটা নতুন করে করবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিস্মারকগুলো রয়েছে, এর মধ্যে গ্রাফিতিও রয়েছে। তারা নিজ দায়িত্বে তা সংরক্ষণ করবেন। আর ওটাকে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
৩১ ডিসেম্বরের ঘোষণা প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ
৩১ ডিসেম্বরের ঘোষণা প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা ওই ঘোষণা দেবেন ওনারা এটা বলতে পারবেন, কী ঘোষণা দেবেন। এ বিষয়ে সরকার তেমন অবগত নয়। ওনারা ঘোষণা দিলে আমরা দেখবো কী ঘোষণা দেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ঘোষণাটা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমরা স্পষ্ট না হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের পক্ষে স্পষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এটা একটি প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ। আমরা এটাকে সেভাবেই দেখছি। এটা সরকারের কোনও বিষয় নয়। সরকারের সঙ্গে এর কোনও সম্পৃক্ততা নেই। যারা এটাকে সাপোর্ট করছেন, তারা প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভকে সাপোর্ট করছেন।