ভালো বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে কিরগিজস্তানে নিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া ১৮০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক অবশেষে দেশে ফিরেছেন। বুধবার ভোর সাড়ে ৩টায় বিশেষ একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। গার্মেন্টস ও নির্মাণ খাতে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের কিরগিজস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা কাজ, বেতন ও পর্যাপ্ত সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন।
বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে ফেরত আসা এই মানুষদের জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম) শরিফুল হাসান জানান, “বেশি বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে এই মানুষদের কিরগিজস্তানে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে অনেকে কাজ ও বেতন পাননি, ফলে তারা কাগজপত্রহীন হয়ে পড়েন। অনেকে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের কাছে মুক্তিপণও দাবি করা হয়েছে।”
লালমনিরহাটের মো. শহীদুল ইসলাম জানান, তাকে ওয়েল্ডিংয়ের কাজের জন্য কিরগিজস্তান নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর একদিন পরেই তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তিনি সাত মাস বিনা বেতনে কাজ করার পর সে দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা দেন এবং তিন মাস জেল খেটে দেশে ফিরতে পেরেছেন।
শরীয়তপুরের প্রিন্স মিয়াকে প্রথমে দুবাই এবং পরে কিরগিজস্তান নিয়ে যাওয়া হয় এই বলে যে সেখান থেকে তাকে ইতালি পাঠানো হবে। দালালকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ৪৪ দিন মধ্য এশিয়ার কারাগারে বন্দী ছিলেন।
কুষ্টিয়ার মো. মিলন আলী জানান, তিনি ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হলেও কোনো সহায়তা পাননি। টানা চার মাস বেতন না পেয়ে তিনি নিজেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা দেন এবং তিন মাসের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। তিনি বলেন, তীব্র রোদে দাঁড় করিয়ে রাখাসহ নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে তাদের ওপর।
ব্র্যাক জানায়, গত আট বছরে তারা ৩৫ হাজারেরও বেশি বিদেশ-ফেরত মানুষকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে। এই বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪০ জন প্রবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশ থেকে বিপদে পড়া প্রবাসীরা ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করলে তাদের সহায়তা ও পুনরেকত্রীকরণের ব্যবস্থা করা হবে।