‘‘কীভাবে শুরু করব ভেবে পাচ্ছি না! গত মে মাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় পাহাড়ি ঢলে বন্যা হয়। এক মাসও হয়নি দ্বিতীয়বার বন্যার থাবায় সাধারণ মানুষ যেন মরার আগে আরেকবার মরেছে! আমরা দেখেছি সুনামগঞ্জের প্রায় প্রতিটি উপজেলার গ্রামগুলোতে বৈশাখ মাসের শুরুর দিকে ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। সে হিসেবে পরপর তিনবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জবাসী। বন্যার পানি কিছুটা কমলেও যে অর্থনৈতিক ধাক্কা মানুষ খেয়েছে তাতে পুর্নবাসনের জন্য প্রয়োজন সহায়তার।সরকারি খাত থেকে যে পরিমাণ সহায়তা এসেছে তা প্রযোজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই বন্যার্তদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ মানুষকে। খাবার নেই,ঔষধ নেই,আশ্রয় নেই, বিদ্যুৎ নেই, বাড়ি-ঘর, রাস্তা ডুবে একাকার। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রবাসীরা বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারছেন না। অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য খাবার না চেয়ে নিরাপদ আশ্রয় চাইছে। আগে তো বেঁচে থাকা! এলাকার কোনো শুকনো জায়গা নেই। কেউ মারা গেলে দাফন করার মতো মাটি নেই! কী নির্মম নিয়তির সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ। প্রাকৃতিক বন্যার চেয়েও মানুষের অসহায়ত্ব, আর্তনাদ, অশ্রুপাতে যেন আরেকটি হৃদয়বিদারক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে!
এমন পরিস্থিতিতে কিছু মানুষ মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে পশুত্ব ধারন করেছে। শুকনো খাবার, মোমবাতির দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা ভাড়া হাজার টাকার জায়গায় পঞ্চাশ হাজার দাবি করতেও বুক কাঁপছে না ওদের। সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা মৃত্যুদূতের সামনে দাঁড়িয়েও লাভের শেষ ব্যবসাটা করে নিতে চায়! আবার অনেকে নিজের খাবার ভাগ করে দেয় অসহায় মানুষের তরে। যারা অমানবিক কাজ করেছে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তবে আশার কথা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এগিয়ে এসে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন। যাদের কাছে সিলেট ও সুনামগঞ্জবাসী কৃতজ্ঞ। একটা বিষয় লক্ষ করলাম। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে স্যোশাল মিডিয়ায় জেলা শহরের কথাই বেশি প্রচার হয়েছে।
আমার জানামতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ের মানুষ। অথচ সেসব এলাকায় ত্রান সামগ্রী পৌঁছায়নি। আপনারা উপজেলা পর্যায়ে ছুটে যান । ছুটে যান গ্রামের মানুষের কাছে।বিশেষ করে সুনামগঞ্জের শাল্লা, দিরাই, বিশ্বম্ভপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়ারা বাজার, ছাতক, মধ্যনগর এলাকাসমূহ। সেসব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছায়নি৷ আমি অনুরোধ করব যাদের সামর্থ আছে বা ইচ্ছা আছে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর। সমাজের বিত্তবান, শিল্প প্রতিষ্ঠান, প্রবাসী ও সকল শ্রেণীর মানুষের প্রতি। তারা যেন সেসব এলাকার মানুষের প্রতি সদয় হোন। মানবিক কাজে এগিয়ে আসেন।
বিনীত
ফাতিন ইশতিয়াক ফয়সাল
কবি, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক,
সুনামগঞ্জ।’