কুয়ালালামপুরে অনুষ্টিত হল আসিয়ানের প্রযুক্তি সহযোগিতা সম্মেলন

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

malaysia news
মালয়েশিযার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্টিত হল আসিয়ানের প্রযুক্তি সহযোগিতা সম্মেলন। মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে এ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।  তিনদিন ব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন,মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী দাতুক আমার হাজি ফাদিল্লাহ হাজি ইউসুফ ।

মালয়েশিয়ার আসিয়ান চেয়ারম্যানশীপ ২০২৫-এর অংশ হিসেবে আয়োজিত এ সম্মেলনে এবার অংশগ্রহণ সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে—অনসাইট প্রতিনিধি ২,০০০ জনেরও বেশি, অনলাইনে লাইভস্ট্রিম দর্শক ৫০,০০০-এর ওপর, এবং ১৩টি দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি চল্লিশেরও বেশি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী, শিল্পনেতা, বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারক অংশ নেওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী আঞ্চলিক প্রযুক্তি সহযোগিতা মঞ্চে পরিণত হয়েছে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে উপপ্রধানমন্ত্রী ফাদিল্লাহ ইউসুফ বলেন, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ এবং আঞ্চলিক ঐক্য—এই তিনটি বিষয় আগামী দশকের রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি হবে। মালয়েশিয়া গবেষণায় তহবিল বাড়ানো, আন্তর্জাতিক উদ্ভাবকদের আকর্ষণ এবং দেশকে আঞ্চলিক বিজ্ঞান সহযোগিতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি আরও ঘোষণা করেন যে ভবিষ্যতে এই সম্মেলন প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হবে, যা দীর্ঘমেয়াদি উদ্ভাবন-অংশীদারিত্বকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার আসিয়ানের অঙ্গীকারকে প্রকাশ করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলন চেয়ারপারসন ও সি-ই-এ -এর সিইও রাভেনা চেন। তিনি বলেন, আসিয়ানের বিশাল জনসংখ্যা, জনমিতিক সুবিধা এবং দ্রুত বিস্তৃত হওয়া ডিজিটাল অর্থনীতি—সব মিলিয়ে অঞ্চলটিকে বৈশ্বিক উদ্ভাবনের কেন্দ্র করে তুলতে পারে। তবে এজন্য সীমান্ত পারাপারের গবেষণা সহযোগিতা, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও দক্ষ জনশক্তি বিনিময় আরও জোরদার করতে হবে।

তার ভাষায়, ভবিষ্যত হবে সহ-সৃষ্ট ও ভাগাভাগি করা। কারণ প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সরবরাহ শৃঙ্খল, ডিজিটাল ট্রাস্ট এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুনভাবে গড়ে দিচ্ছে।

এশিয়া প্যাসিফিক বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালক অ্যান্টোনিও আই. বাসিলিও বলেন, বৈশ্বিক জিডিপির ৬০ শতাংশের বেশি ধারণকারী এপেক অঞ্চলের সঙ্গে আসিয়ানের পারস্পরিক নির্ভরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, মালয়েশিয়ার বিকাশমান সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, অগ্রসরমান ডিজিটাল নীতি, এবং সরকার–শিল্প–শিক্ষাজগতের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক দেশটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাসনব্যবস্থা, ডিজিটাল বাণিজ্য, টেকসই সরবরাহ শৃঙ্খল, সবুজ শিল্প এবং সীমান্ত-পার গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৌশলগত খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।

তার মতে, টেকসই উন্নয়ন, উদীয়মান প্রযুক্তি কিংবা তথ্য শাসন—যে চ্যালেঞ্জই হোক—বিচ্ছিন্ন জাতীয় প্রচেষ্টায় নয়, বরং আসিয়ান ও এপেকের সম্মিলিত উদ্যোগেই মোকাবিলা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ উন্মোচন করা হয়। এর মধ্যে ছিল, কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সামিট টোয়েন্টি টোয়েন্টি-ফাইভ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন, এশিয়ান ইকোনমিক শীর্ষক নতুন প্রকাশনার উন্মোচন, ইনট্রিনসিক সি-এ-আ’-এর সঙ্গে সাই-এ-এফ, এ-আই-এস-ই-ডি এবং মাইমস-এর সহযোগিতা চুক্তি (এম-ও-ইউ) স্বাক্ষর।

এই প্রচেষ্টা মালয়েশিয়াকে আসিয়ানের উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম ও বৈশ্বিক বিজ্ঞান সহযোগিতার সংযোগস্থলে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করবে। পাশাপাশি আঞ্চলিক বিজ্ঞান ও নীতি নেতাদের উচ্চপর্যায়ের কী-নোট আলোচনায় উদীয়মান প্রযুক্তি, স্টিম শিক্ষা এবং সীমান্ত-পার উদ্ভাবন নেটওয়ার্কের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়।

২৮ নভেম্বর শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপ, বৈজ্ঞানিক সেশন, শিল্প ফোরাম ও উদ্ভাবন প্রদর্শনী। আলোচ্য বিষয়ে ছিল—ভবিষ্যৎ গতিশীলতা, ডিজিটাল ও প্রিসিশন স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই ভবন প্রযুক্তি, হালাল ডিজিটাল অর্থনীতি, শিক্ষা ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন, সরকারি–বেসরকারি খাতের দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈঠক

এ ছাড়া ইনট্রিনসিক পিচ ২০২৫ -এ উদীয়মান স্টার্টআপ ও আঞ্চলিক ভেঞ্চার বিনিয়োগকারীরা মুখোমুখি হন উদ্ভাবন প্রদর্শনীতে।

বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক, শিল্পখাত এবং বৈশ্বিক উদ্ভাবন সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে আয়োজিত এই সম্মেলন মালয়েশিয়ার উদ্ভাবন কূটনীতির নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করেছে। এ–টি–সি–ডি–এস ২০২৫ -এ গৃহীত আলোচনা ও অংশীদারিত্ব আগামী বছরগুলোতে নতুন গবেষণা উদ্যোগ, নীতি কাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচি এবং দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা গড়ে তুলবে। যা আঞ্চলিক উদ্ভাবন-পরিবেশকে দীর্ঘকাল প্রভাবিত করবে।



ভালো সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ ফিডটি অনুসরণ করুন


Google News

Share This Article