
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর দুর্গম চরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহতের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মণ্ডল গ্রুপের নিহত আমান মণ্ডলের বাবা মিনহাজ মণ্ডল বাদী হয়ে আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় কাকন বাহিনীর প্রধান কাকনসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার নিচ খানপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমানে রাজশাহীর বাঘায় বসবাসরত মণ্ডল বাহিনী ও দৌলতপুরের কাকন বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও দুজন গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গোলাগুলির খবর পেয়ে নিকটস্থ বাঘা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ গুলির খোসা, কয়েকটি তাজা গুলি ও রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। তবে ঘটনাস্থলটি কোন থানার আওতাধীন—তা নির্ধারণ করতে রাজশাহী ও খুলনা রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল মঙ্গলবার সারা দিন মাঠে থাকেন, যার ফলে মামলা কার্যক্রমে বিলম্ব হয়। পরে নির্ধারিত হয়, ঘটনাস্থল কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার আওতায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোলাগুলিতে নিহত ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নিচ খানপাড়া এলাকার মিনহাজ মণ্ডলের ছেলে আমান মণ্ডল (৩৬) এবং শুকুর মণ্ডলের ছেলে নাজমুল মণ্ডল (২৬)। নিহত ব্যক্তিরা মূলত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন; নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাঁরা বাঘার নিচ খানপাড়ায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করতেন।
অন্যদিকে গতকাল সকালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পদ্মা ঘাট থেকে লিটন (৩০) নামের আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পাবনা নৌ পুলিশ। নিহত লিটনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি ওই ইউনিয়নের ঘোষপাড়া এলাকার মৃত জামরুল ঘোষের ছেলে। পেশায় তিনি কসমেটিকস ব্যবসায়ী ছিলেন এবং কাকন বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, নিহত আমান মণ্ডলের বাবা মিনহাজ মণ্ডল বাদী হয়ে মামলা করেছেন। পদ্মার চরাঞ্চলটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ অভিযানে রয়েছে।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাস্থলের সীমানা নিয়ে জটিলতা ছিল, আমরা সরেজমিনে তা নির্ধারণ করেছি—এটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার আওতাধীন এলাকা। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণে গুলির খোসা ও রক্তাক্ত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বিকেলে কাকনসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন মণ্ডল গ্রুপের নিহতের পরিবার। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
অভিযুক্ত কাকন বাহিনীর প্রধান কাকন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের মাঝদিয়াড় গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয়ে পদ্মা নদীর বালুমহাল ও চরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি বালুমহাল দখল ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে গড়ে তোলেন সশস্ত্র ‘কাকন বাহিনী’। বর্তমানে এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্যসংখ্যা ৪০ জনের বেশি। তারা দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, বাঘা ও নাটোরের পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।