
নেপালের মানাসলু পর্বতশৃঙ্গে লাল-সবুজের পতাকা উড়ালেন বাংলাদেশের দুই পর্বতারোহী ডা. বাবর আলী ও তানভীর আহমেদ। বৃহস্পতিবার ভোরে তারা সফলভাবে পৌঁছে যান পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসলুর (৮১৬৩ মিটার) চূড়ায়।
গণমাধ্যমকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন এই অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান। এই অভিযানের আউটফিটার স্নোয়ি হরাইজন ট্রেক্স অ্যান্ড এক্সপিডিশনের সত্ত্বাধিকারী বোধা রাজ ভান্ডারি এই তথ্য জানান।
এর মাধ্যমে ইতিহাস গড়লেন দেশের অন্যতম শীর্ষ পর্বতারোহী এভারেস্টজয়ী ডা. বাবর আলী। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী, যিনি আট হাজার মিটার উচ্চতার পর্বত জয় করলেন কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই। অন্যদিকে, তানভীর আহমেদ তার প্রথম আটহাজারি অভিযানে চূড়ায় পৌঁছে ভাঙলেন আরেকটি ট্যাবু- প্রাতিষ্ঠানিক মাউন্টেনিয়ারিং শিক্ষা ছাড়াই এই উচ্চতায় জয় সম্ভব।
তানভীর ও বাবর বাংলাদেশ থেকে নেপালে গিয়েছেন ৫ সেপ্টেম্বর। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে ৭ সেপ্টেম্বর তারা কাঠমান্ডু থেকে গাড়িতে যান তিলচে গ্রামে। এরপর পাঁচ দিন হেঁটে তারা পৌঁছে যান বেসক্যাম্পে। সেখানে দুইদিন বিশ্রাম তারা শুরু করেন উচ্চতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া। প্রথম দফা ক্যাম্প-১ (৫৭০০ মিটার) এ এক রাত কাটিয়ে তারা নেমে আসেন। একদিন বিশ্রামের পর দ্বিতীয় দফা আরোহণে তানভীর ক্যাম্প-২ (৬৩০০ মিটার) এবং বাবর ক্যাম্প-৩ (৬৭০০ মিটার) এ রাত কাটিয়ে শেষ করেন উচ্চতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব।
একদিন বেসক্যাম্পে বিশ্রামের পর আসে চূড়ান্ত চেষ্টার ক্ষণ। তানভীর ২২ সেপ্টেম্বর বেসক্যাম্প থেকে যাত্রারম্ভ করে উঠে আসেন ক্যাম্প-১ এবং পরদিন উঠে আসেন ক্যাম্প-২। এদিকে বাবর একদিন পর রওনা দিয়ে সরাসরি উঠে আসেন ক্যাম্প-২ এ। ২৪ সেপ্টেম্বর দুইজনেই ক্যাম্প-৩ তে রাত কাটিয়ে পরদিন দুপুর নাগাদ পৌঁছে যান ক্যাম্প-৪ এ (৭৪০০ মিটার)। বাকিবেলা বিশ্রাম করে রাত নামতেই শুরু হয় তাদের পরম আরাধ্য চূড়ার দিকে যাত্রা। আর ২৬ সেপ্টেম্বর ভোরেই তারা পৌঁছে যান পর্বত শীর্ষে। শিখরে এই দুইজনের সাথে গাইড হিসেবে ছিলেন বীরে তামাং এবং ফূর্বা অংডি শেরপা। তারা এখন চেষ্টা করবেন যত দ্রুত যতটা সম্ভব নিচে নেমে আসতে। নেটওয়ার্কের বাইরে থাকায় শিখরের ছবি পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
ফরহান জামান আরও বলেন, তানভীর আরও অনেক পর্বতে যেতে চায়। আর বাবরও চায় ১৪টি আটহাজারি শৃঙ্গের সবকটিতেই চড়তে। মাত্র ৪টি হলো- বাকি আছে আরও ১০টি। আশা করি পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চলতে থাকবে পর্বত থেকে পর্বতে লাল-সবুজের পতাকা উড্ডয়ন উৎসব।
বাবর আলী দেশের শীর্ষস্থানীয় পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সাধারণ সম্পাদক এবং তানভীর আহমেদ এই ক্লাবের মাউন্টেনিয়ারিং বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত। তানভীর গতবছর অন্যতম টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলাম সামিট করেন, প্রথম বাঙালি হিসেবে যেই পর্বত ২০২২ সালে সামিট করেছিলেন বাবর।
‘ভিএফ এশিয়া বাংলাদেশ’র এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত তানভীর কিশোরগঞ্জ সদরের খরমপট্টি নিবাসী অ্যাড. তারেক উদ্দিন আহমদ এবং শিরীন আহমেদের প্রথম সন্তান এবং নিজেই এক কন্যা সন্তানের পিতা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ২০০৬ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচে ডাক্তারি পাশ করা ডা. বাবর আলী চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার নজুমিয়া হাটের লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগম এর দ্বিতীয় সন্তান।