আগামী সংসদ নির্বাচন কেমন হবে?

শেখ রিফাদ মাহমুদ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এগারো মাস বাকি থাকলেও, এখন থেকেই চারিদিকে নির্বাচনী উত্তাপ্ত শুরু হয়েছে। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। ব্যালট নাকি ইভিএম, কে মনোনয়ন পাচ্ছে বা কার সম্ভবনা আছে এসব নিয়ে আলোচনা-সমলোচনায় মেতে উঠছেন সাধারণ মানুষরা। 

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। 

দেশের বৃহৎ দুই দলই বেশ উচ্চৈঃস্বরেই নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। প্রতিটি সভা-সমাবেশে প্রচুর জনসমাগম ঘটিয়ে তারা নিজেদের শক্তি, সামর্থ্যের প্রমাণ দিচ্ছে।  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, বর্তমান সরকারের অধিনেই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের বাইরে যেয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার গঠনের সুযোগ নেই। মোটকথা নির্বাচন পরিচালনার জন্য স্বল্প সময়ের কোনো সরকারকে ক্ষমতা আওয়ামী লীগ দেবে না।

অন্যদিকে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে করে আসছে। বর্তমান সময়ে বিএনপির আন্দোলন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বেশ জোড়ালে হয়েছে। বিএনপি জানাচ্ছে সরকারি দলের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা কোনোভাবেই অংশ নিবেনা। বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে একের পর এক রাজপথের কর্মসূচি দিচ্ছে এবং কর্মসূচি গুলোতে উল্লেখযোগ্য লোকের গণসমাগম ঘটিয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের শরিকদের নিয়ে গঠিত ১২দলীয় জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ এবং সমমনা জাতীয়তাবাদী জোটের প্রায় ৩০-৩২টি দলও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবিতে নিজ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। 

বিএনপির ৪০লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলা থাকার পরেও

হঠাতই দলটির ঘুরে দাঁড়ানোয় সবাই বিস্মিত। মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে আত্ম কোন্দল থাকলেও বর্তমানে সবকিছু ছাপিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিই মূখ্য হয়ে উঠেছে।নেতাকর্মীদের চোখেমুখেও আত্মপ্রত্যয়ের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জনবান্ধব বিষয়গুলোর ওপর কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি জনসমর্থন পাচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা নিয়ে কর্মসূচি থাকায় একদম সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা খুব ভালোভাবেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কূটনীতিকদের মাঝে বেশ তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিষয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন তাঁরা। বিগত এক বছর ধরে বিএনপি নেতারা কূটনীতিকদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগও কূটনৈতিকদের সাথে বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করেছেন। বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কূটনৈতিকদের নিকট বিভিন্ন কথা বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবিতে কথা বলছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা কূটনৈতিকদের সাথে বৈঠকের পর জানাচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের আলাপ হয়।

সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়া এক্সপার্ট খ্যাত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ভারতের দিল্লিতে দুইদিনের সফর শেষে তিনি এসেছিলেন বাংলাদেশে। ডোনাল্ড লু ২৪ঘন্টার এই রাজনৈতিক সফরে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলেছেন। সফরে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সরকার ও বিরোধী দলগুলো উভয়ই যেন শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায় এ ব্যাপারটি নিশ্চিতের জন্য তিনি আহবান জানিয়েছেন। সরকারী দল আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকেও ডোনাল্ড লু’কে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচন নিশ্চিত করার ব্যাপারে অঙ্গীকার করা হয়েছে। 

বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপিকে মাঠ ছেড়ে ভোটের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে স্পষ্টত ধারণা করাই যায় বিএনপি না এলে বিএনপিকে ছাড়াই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হবে সংবিধান; সে আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ক্ষমতাসীনদের প্রতি বিভিন্নভাবে বিদেশী চাপ আসলেও সংবিধান সমুন্নত রাখার কৌশলেই আগাচ্ছে তারা কেননা প্রতিটি দেশেরই আলাদা আইন-সংবিধান রয়েছে; সে প্রেক্ষিতে বিদেশীরা সংবিধান বা আইন লঙ্ঘনের জন্য চাপ দিতে পারবে না এমনটাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ধারণা। তবে যেহেতু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, সেহেতু আগামী নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে সেটি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে জানার জন্য এখনও কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে।

শেখ রিফাদ মাহমুদ

চেয়ারম্যান, এসআরআই ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন

উপদেষ্টা পর্ষদ সদস্য, গ্লোবাল স্টুডেন্ট ফোরাম

Share This Article