কোটি টাকা নিয়ে উদাও স্বপরিবার, বাড়িতে পাওনাদারদের ভিড়

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

শরীয়তপুরের সদর উপজেলায় জমি বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা নিয়ে এক ব্যক্তি স্বপরিবারে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার খবর জানাজানি হতেই আশপাশের পাওনাদার সহ স্থানীয়রা ভিড় করেন তাদের বাড়িতে।

মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় উৎসুক জনতার ভিড়। অনেকেই এসে দেখেন বন্ধ দরজা-জানালা, ফাঁকা উঠান। বাড়ির আশপাশে কৌতূহলী মানুষের জটলা লেগে যায়।

ঘটনাটি শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের পরাসদ্দী গ্রামে ঘটেছে।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আংগারিয়া ইউনিয়নের মিন্টু ফরাজির স্ত্রী রোকেয়া বেগম ২০২২ সালে একই এলাকার সেনা সদস্য এমদাদুল হকের স্ত্রী আঞ্জুমান ইসলামের কাছে জমি বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে বায়না বাবদ প্রায় চল্লিশ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন রোকেয়া। একইভাবে রিনা বেগমের কাছথেকে বারো লাখ টাকা, লাকি আক্তারের পঞ্চাশ হাজার ও ইয়ারুন বেগমের কয়েক ভরি স্বর্ণ হাতিয়ে নেন তিনি। এরপর অভিযুক্ত রোকেয়া ও স্বামী মিন্টু ফরাজি সেই টাকা দিয়ে দুটি ট্রাক কিনেন। কথা ছিলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত ও জমির দলিল রেজিস্ট্রি করে দিবেন রোকেয়া। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমি রেজিস্ট্রি না করে নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেন রোকেয়া ও মিন্টু। পরে জমি রেজিস্ট্রি অথবা টাকা ফেরত চাইলে শুরু হয় টালবাহানা। এনিয়ে স্থানীয় ভাবে ও আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়ীতে একাধিক বার মিমাংসা করার চেষ্টা করা হলে রোকেয়া বেগম সালিসির সময় টাকা ফেরত অথবা জমি লিখে দেওয়ার কথা বললেও তিন বছরে হলেও এখন টাকা কিংবা জমি বুঝিয়ে দিতে পারেন নি। এখন বায়না চুক্তি অনুযায়ী জমি হস্তান্তর না করায় আঞ্জুমান টাকা ফেরত চাইলে উল্টো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে চার-পাঁচ দিন ধরে কোটি টাকা নিয়ে স্বপরিবার লাপাত্তা হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী আঞ্জুমান ইসলাম বলেন,” আমাকে জমি বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় চল্লিশ লাখ টাকা বায়না নিয়েছে। জীবনের সব সঞ্চয় তুলে দিয়েছিলাম তার হাতে। ভাবছিলাম নিজের একটা ঘর হবে। এখন মনে হয়, ভুল করে জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। রোকেয়া বলেছিল দ্রুত দলিল ও জমি বুঝিয়ে দিবে। এখন টাকাও দিচ্ছে না জমিও দিচ্ছে না। টা ফেরত চাইলে উল্টো হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমাদের হয়রানি করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বলে আমি না কি তাকে সুধে টাকা দিয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের মানহানী করতেছে। আমি প্রশাসনের কাছে ও আপনাদের কাছে ন্যায় বিচারক চাই।”

ভুক্তভোগী রিনা বেগম বলেন, “ আমার স্বামী একজন প্রবাসী। আমাকে জমি দিবে বলে প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়েছে রোকেয়া। হটাৎ শুনলাম সে না কি বাড়ী ছেড়ে সবাইকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এসে তাই দেখলাম রোকেয়ার ঘর তালা মারা কেউ বাড়ীতে নেই। আমি এখন কোথায় যাবো কি করবো এই টাকা কি ভাবে ফেরত পাবো সেটাই ভাবছি। আমার স্বামীর কাছে আমি কি জবাব দিবো। আপনারা যেভাবে হউক তাকে এনে দেন। আমি তাকে টাকা দিয়ে আজ পথে বসে গেছি।

ভুক্তভোগী ইয়ারুম বেগম বলেন,” রোকেয়া বেগম আমার পরিচিত। কিছুদিন আগে হটাৎ আমার বাসায় গিয়ে বলে আমি এক আত্মীয় বাড়ীতে বিয়ের দাওয়াতে যাবো আপনার গহনা গুলো আমাকে একটু দেন আমি এসে দিয়ে দিবো। এখন এতোদিন হয়ে গেলো এখনো আমার গহনা ফেরত দিচ্ছে না। আমি কয়েকবার নিতে এসেছি কিন্তু রোকেয়া বিভিন্ন টালবাহানা করে। গতকাল শুনলাম সে নাকি পালিয়েছে। তাই বাসার এসে দেখলাম কেউ নেই তারা ফোন বন্ধ করে রেখেছে। আমি এখন কোথায় যাবো ভাই।

লাকি আক্তার নামে আরও এক ভুক্তভোগী বলেন,” দুদিনের কথা বলে আমার কাছথেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার নিয়েছে। এখন প্রায় দু’বছর হয়। পনেরো দিন আগে বললো সামনের মাসে দিবো। এখন কাল শুনলাম সে না কি বাড়ী ছেড়ে সবাইকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমার টাকা না পেয়ে আমার পারিবারিক ঝামেলা হবে। আমি প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।

এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রোকেয়া বেগমের বাড়ীতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় নি। তার ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় নি।

এ ব্যাপারে আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়ীর ইনচার্জ বিকাশ চদ্র চৌধুরী বলেন, ” বিভিন্ন জায়গায় থেকে টাকা নেওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Share This Article