আমিরুল ইসলাম
বর্ষা মৌসুমে শুরু থেকেই অঝরে বৃষ্টি। বলা চলে খরার দেখা মেলেনি। গেল বর্ষার চেয়ে এবারে বৃষ্টির পরিমাণ তিনগুণ। খুলনার চাষী ক্ষেতে, ঘেরের আইলে এবং বাড়ীর আঙ্গিনায় সবজির বীজ রোপন করেই বিপাকে পড়ে। বর্ষায় সকল প্রকার সবজি ক্ষেতেই পচেছে। জেলায় এবারে ৩৫ কোটি টাকা মূল্যের সবজি ক্ষেতেই পচেছে। যে কারণে কার্ত্তিকের শুরুতে সবজির মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। শীতের সবজির আগাম চাষ করেও কৃষক বিপাকে পড়েছে।
আবহাওয়া অফিসের সূত্রে জানান, এ বছরে জুন মাসে ৭২ মিঃ মিঃ, জুলাই মাসে ৩০৯ মিঃ মিঃ, আগস্ট মাসে ৫০২ মিঃ মিঃ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৩৪৫ মিঃ মিঃ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
সূত্র বলছে, গেল বর্ষা মৌসুমে আগস্ট মাসে ২৯৮ মিঃ মিঃ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ১৮২ মিঃ মিঃ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সূত্র জানায়, এবারে বৃষ্টিতে ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, দিঘলিয়া, ফুলতলা ও রূপসা উপজেলার সবজি ক্ষেতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি অধিদপ্তরের সূত্র বলেছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় ৮৪২ হেক্টর জমির ৬হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে। জেলায় এবারে ১২শ’ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৫হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। ১০হাজার ২৪০ জন কৃষক আবাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। এবারে গ্রীষ্ম মৌসুমে জেলায় পেঁপেঁ, সীম, টমেটো, কচুরমুখী, ওল, বেগুন, গিমে কলমী, লালশাক, বরবটি, ঢেঁড়স, শসা, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দল, চিচিংঙ্গা ও ঝিঙের আবাদ হয়। জেলায় এবারে কাঁচাঝাল ও বেগুনের আবাদ বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এদিকে, নগরীর বড়বাজার, নতুন বাজার ও মিস্ত্রিপাড়া বাজারে কাঁচাঝালের কেজির মূল্যে তারতম্য ছিল। কোথাও ৩শ’ টাকা আবার কোন বাজারে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বুধবার ভ্যানে বিক্রেতারা ২৬০ টাকা দরেও কাঁচাঝাল বিক্রি করে। নগরীর বাজার গুলোতে আলু ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ১১৫ টাকা, ঝিঙে ৭০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০টাকা, লালশাক ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি বরবটির মূল্য ছিল ১২০টাকা। আগস্টের শেষ দিকে বরবটি ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। খুলনার বাজারে সবজি যোগান দিতে মনিরামপুর, কেশবপুর ও নওয়াপাড়া থেকে নানা ধরনের সবজি আসছে। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন তিন হাত বদলের কারণে সবজির দাম বেড়েছে। তবে অতিবৃষ্টিতে ক্ষেতে সবজি মারা যাওয়ার কারণে বাজারের সরবরাহ কমেছে।
সূত্র আশা করছে, কার্ত্তিকের মাঝামাঝি সময় থেকে মূলা, সীম ও ফুলকপি চলমান সংকট মিটাতে সক্ষম হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জেলায় অতিবৃষ্টিতে ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের সবজি নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। উঁচু জমিতে লালশাক, বেগুন ও ফুলকপির আবাদ শুরু করেছে। ফুলতলা থেকে নিয়মিত বাজারের লাউয়ের সরবরাহ হচ্ছে।
তিনি তথ্য দিয়েছেন ১৫ অক্টোবর থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। ক্যাশমেমোর বাইরে বিকিকিনি নিষিদ্ধ থাকবে।