
স্টাফ রিপোর্টার।।
খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু সংক্রমণ আগষ্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিগুনের বেশি বেড়েছে। সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যর সংখ্যা। প্রতি দিন খুলনা বিভাগে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হচ্ছে। চলতি মাসে (১-১৫ সেপ্টেম্বর) গত ১৫ দিনে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালসহ খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৪৯০ জন। এ সময়ে মৃত্যু হয় ৩ জনের। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ৬২ জন এবং মুত্যু হয় ৩ জনের। চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ গত সাড়ে ৮ মাসে খুলনা বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৩৭১ জন এবং মৃত্যু হয় ৬ জনের। খুলনা বিভাগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও খুমেক হাসপাতলের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি যেমন, তাতে ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে মশাবাহিত এ রোগ মোকাবিলায় তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি করপোরেশন। খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া ডেঙ্গু রোীগর এক প্রতিবেদনে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে খুলনায় ১৫ জন, যশোরে ১২ জন, কুষ্টিয়ায় ৩ জন এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এ সময়ের মধ্যে কোন মৃত্যু খবর পাওয়া যায়নি। চলতি মাসে ১৫ দিনে খুলনা বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪৯০ জন এবং মুত্য হয় ৩ জনের। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হয় ৬২ জন এবং মুত্যু হয় ৩ জনের। চলতি বছরের শুরু থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৩৭১ জন এবং মৃত্যু হয় মোট ৬ জনের। এর মধ্যে খুলনায় ৩৫৪ জন, বাগেরহাটে ২৪ জন, সাতক্ষীরায় ১৫ জন, যশোরে ২৮৫ জন, ঝিনাইদহ ৫৩ জন, মাগুরায় ২৮ জন, নড়াইলে ১৩০ জন, কুষ্টিয়ায় ১০১ জন, মেহেরপুরে ১৯৭ জন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ জন এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন। এ পর্যন্ত মারা যাওয়ার মধ্যে যশোরে ২ জন এবং খুমেক হাসপাতালে ৪ জন রয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডাক্তার সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, চলতি (সেপ্টেম্বর) মাসে শুরু থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৬২ জন। এর মধ্যে মৃত্য হয় ৩ জনের। চিকিৎসাধীন অবস্তায় মারা যাওয়ার মধ্যে ২ সেপ্টেম্বর একজন, ১০ সেপ্টেম্বর একজন এবং ৭ সেপ্টেম্বর একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছিলো। এর আগে মাসে আরও দুইজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে , তিনি বলেন, চিকিৎসক, নার্স ও জনবল সংকটের কারণে আলাদা ভাবে ডেঙ্গু রোগীর ওয়ার্ড চালু করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয় ১৭৬ জনকে। এ সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪৪ জন। আর মৃত্যু হয় মোট ৫ জনের। আরএমও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মানুষদের সচেতন হওয়ার কোন বিকল্প নেই। সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বাইরে চলে যাবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এখন অনেকেই জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে গলা ও মাথাব্যাথা, খাবারের অরুচির বিষয়টিও দেখা যাচ্ছে। এর কারণ ঋতু পরিবর্তন বা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। এর কিছু উপসর্গ ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও দেখা যায়। পরীক্ষা না করানো পর্যন্ত কোনটি সাধারণ জ্বর, কোনটি ডেঙ্গুর জ্বর আর কোনটি করোনা ভাইরাসের জ্বর তা নির্ণয় করা যায় না। কেউ করানোর পর ডেঙ্গু বা ডেঙ্গুর পর করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তার মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে নমুনা পরীক্ষা ক্ষেত্রে মানুষের অনীহা রয়েছে। উল্লেখিত উপসর্গ দেখা দেয়ার পরও ফার্মেসী থেকে নাপা, প্যারাসিটামাল খেয়ে ৪-৫ দিন পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এই জন্য সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। খুলনা বিভাগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, ২০২৩ সালে খুলনা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে খুলনা জেলায় ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি ছিলো। ওই বছরে খুলনা জেলায় মোট ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয় ৬ হাজার ৮৩৪ জনকে। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ছিলেন ৩ হাজার ৮২৫ জন। এসময় খুলনা জেলায় মোট মৃত্যু হয় ৪১ জনের। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৩৯ জনের।