[ad_1]
বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে পরিচালিত বেশ কয়েকটি ইউনিটের দ্বারা বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বলপূর্বক গুম সংঘটিত হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমসকে (সিটিটিসি) গুমের প্রাথমিক অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ভুক্তভোগী, সাক্ষী এবং পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া বলপূর্বক গুম সম্পর্কিত তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের শেয়ারযোগ্য অংশ গণমাধ্যমে দেওয়া হয়। সেখানে যে প্রক্রিয়ায় জোরপূর্বক অন্তর্ধান করা হয়েছিল বলে কমিশনের মূল্যায়নে উঠে এসেছে তার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগের প্রাথমিক পর্যালোচনা করেছে কমিশন। কমিশন বলছে, আমাদের অনুসন্ধানের একটি মূল অনুসন্ধান হলো ‘গুম সংস্কৃতি’ বা জোরপূর্বক অন্তর্ধানের সংস্কৃতি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পদ্ধতিগতভাবে নকশা করা হয়েছিল। তারা এমনভাবে কাজটা করতো, যাতে শনাক্ত করা না যায়। উদাহরণ হিসেবে কমিশন বলছে, নিরাপত্তা বাহিনী প্রায়শই সাধারণ পোশাকে কাজ করতো এবং তাদের কার্যকলাপের বিষয়ে মিথ্যাভাবে অন্যান্য সংস্থাকে দায়ী করতো। যদি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই) কাজ করতো, তাহলে তারা র্যাবের কাজ বলে দাবি করতো; যদি এটি র্যাবের কাজ হতো, তবে তারা ডিবি বলে দাবি করতো। এমনকি বাহিনীগুলো নিজেদের মধ্যে ভুক্তভোগীদের বিনিময় করতো, একটি বাহিনী অপহরণ করতো, অন্যটি কারারুদ্ধ করতো, তৃতীয়টি হত্যা করতো বা ভুক্তভোগীদের মুক্তি দিতো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাউকে গুম করার ক্ষেত্রে দুই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। অনেক সময় প্রথমে কাউকে আটক করে নির্যাতন করে অন্যদের নাম আদায় করা হতো। এরপর তাদেরও ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। পরে এদের সবাইকে গুম করা হতো। এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি বা নেতার সরাসরি নির্দেশেও গুম ও নির্যাতন করা হতো।
গুমের ক্ষেত্রে ভিকটিমদের অবস্থান চিহ্নিত করতে মোবাইল প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হতো বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি) এবং পরবর্তী সময়ে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) মোবাইল নজরদারি পরিচালনা করেছে বলে কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে আসে।
একজন ভুক্তভোগীর উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কল রেকর্ডে দেখা গেছে, অপহরণের পরপরই ডিজিএফআই সদর দফতরে তার সিম কার্ড সক্রিয় করা হয়। সেই সময়ে ১৭ বছর বয়সে তাকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল এবং তার সহকর্মী বন্দিদের বিবরণে তার প্রথম অবস্থানটি ডিজিএফআই’র জেআইসি ছিল তা নিশ্চিত জানা গেলেও, পরবর্তী সময়ে তাকে ঢাকার বেশ কয়েকটি র্যাবের আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, যা আমরা বর্ণিত বিবরণের মাধ্যমে চিহ্নিত করেছি। কয়েক মাস পরে চট্টগ্রামের র্যাব-৭ দ্বারা তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
বলপূর্বক গুম মৌলিক মানবাধিকারকে মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করে ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছে। কমিশন মনে করে, লঙ্ঘিত অধিকারগুলির মধ্যে রয়েছে, আইনি সুরক্ষার অধিকার এবং আইনের সামনে একজন ব্যক্তি হিসাবে সমান স্বীকৃতির অধিকার, যা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের নিয়মিত চোখ বেঁধে রাখা হতো এবং অপহরণকারীরা তাদের কাছ থেকে অবস্থানের তথ্য গোপন করতো। এই পদক্ষেপগুলি দোষ অস্পষ্ট করার জন্য নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে সরাসরি দায়বদ্ধতার সন্ধান করা কঠিন হয়ে পড়ে। ডিটেনশন সেলের অবস্থানগুলিতে দৃশ্যমান সাদৃশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে বলে কমিশন শনাক্ত করেছে। বিভিন্ন র্যাব ইউনিট দ্বারা আক্রান্তদের রাখা ডিটেনশন সেলগুলি প্রায়শই ভৌগলিকভাবে দূরবর্তী স্থানে থাকা সত্ত্বেও অস্ত্রাগারের কাছে বা অনুরূপ বিন্যাসে পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন উদাহরণ হিসেবে হাজির করেছে, নারায়ণগঞ্জের ১১ নম্বর র্যাবের সঙ্গে চট্টগ্রামের ৭ নম্বর র্যাবের সেলের মিল এবং মোহাম্মদপুরের ২ নম্বর র্যাবের সঙ্গে যুক্ত ডিটেনশন সেলগুলো প্রায় অভিন্ন। এ ধরনের অভিন্নতা দৃঢ়ভাবে কেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা এবং তদারকির ইঙ্গিত দেয় বলে মত দিয়েছে কমিশন।
কমিশন মনে করে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশের একমাত্র বিচারিক ফোরাম। অপহরণ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত অপরাধের প্রেক্ষাপটে ১৯৫২ সালের সেনা আইনের বিশেষ ঘাটতিগুলির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার এখতিয়ারের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
[ad_2]
Source link