টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে গৃহবধূর গোসল ও ইমুর ফোন কলে ধারণ করা নগ্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মো.রিপন নামে (২৫) একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত শুক্রবার থানায় গৃহবধূর মা মোছা: আছমা’র করা পর্ণগ্রাফি আইনে মামলায় অভিযুক্ত রিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের ঢালুয়াবাড়ি গ্রামে।
গৃহবধূর মা আছমা ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের পাগারিয়া গ্রামের মো.সুলতানের মেয়ে ওই গৃহবধূ (২০)। একই উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের ঢালুয়াবাড়ি গ্রামের মো.শাহজালালের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের প্রায় ৮ মাস পর জীবিকার তাগিদে শাহজালাল পাড়ি জমান ডুবাই। স্বামীর বাড়িতেই থাকেন ওই গৃহবধূ। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো এক দিন গোসল করতে যান তিনি। গোসলখানার টিনের ছিদ্র দিয়ে কৌশলে মোবাইল ফোন দিয়ে গোসলরত অবস্থার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করেন ঢালুয়াবাড়ি গ্রামের মো. আজিজের ছেলে মো.রিপন।
পরে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে গৃহবধূর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করেন রিপন। সম্মানের ভয়ে নিরুপায় হয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে রিপনকে গত বছরের ২২ মার্চ ৫০ হাজার টাকা দেন তিনি। টাকা পাওয়ার কিছুদিন পর একই কারণ দেখিয়ে রিপন পুনরায় দুই লাখ দাবী করেন। এত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান গৃহবধূ। কৌশল খাটান রিপন। নতুন ফন্দিতে শর্ত দেন গৃহবধূ যদি তার ব্যবহৃত ইমু নম্বর দেন তবে ফোন থেকে গোসলের আপত্তিকর ভিডিও ডিলিট করে দেওয়া হবে।
কোনো উপায় না দেখে ইমু নম্বর দেন তিনি। নম্বর পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রিপন। প্রতিনিয়ত সেই নম্বরে ফোন করে বিরক্ত করতে থাকেন। ইমুতে ভিডিও কল করে ওই গৃহবধূকে নগ্ন হতে বলেন। হুমকি দেন তার কথা না মানলে পূর্বের করা গোসলের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার।
একপর্যায় রিপনের কথা মানতে বাধ্য হন ওই গৃহবধূ। ইমুতে করা ভিডিও কলের দুইটি নগ্ন ভিডিও ধারণ করেন রিপন। এবার সেই ভিডিও দেখান গৃহবধূকে। দাবী করেন দুই লাখ টাকা। কোনো উপায় না দেখে গৃহবধূ বিষয়টি তার মা মোছা: আছমাকে অবগত করেন। মেয়ের সংসারের কথা ভেবে মা বিভিন্ন জায়গা থেকে দুই লাখ টাকা জোগাড় করে গত বছরের ১৭ জুন রিপনের হাতে তুলে দেন। বেপরোয়া রিপন কিছুদিন পর আবারও টাকা দাবী করেন দুই লাখ। এবার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান গৃহবধূ ও তার মা।
অনৈতিক দাবী পূরণ না করায় গোসল এবং ইমুতে করা আপত্তিকর ভিডিওগুলো তার বন্ধু ঢালুয়াবাড়ি গ্রামের আবু বকরের ছেলে তোফাজ্জল হোসেনের মোবাইলে (২৭) শেয়ার করে দেন। বন্ধু রিপনের দেখানো পথ অনুসরণ করে তোফাজ্জল হোসেনও ভয় দেখিয়ে গৃহবধূ ও তার মায়ের কাছে টাকা দাবী করেন।
তোফাজ্জলকেও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান তারা। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল তোফাজ্জাল গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে যান। স্বামীর পরিবারের সদস্যদের ভিডিও দেখিয়ে টাকা দাবী করেন। টাকা না দিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। গৃহবধূর স্বামীর পরিবারও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। টাকা না পেয়ে নগ্ন ওই আপত্তিকর ভিডিও তিনটি রিপন ও তোফাজ্জল মিলে তাদের পরিচিতজন ও অন্য বন্ধুদের মোবাইলে শেয়ার করে এলাকায় ছড়িয়ে দেন।
ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বলেন,এ ঘটনায় পর্ণগ্রাফি আইনে থানায় মামলা হয়েছে। মূল আসামী রিপনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আলামত হিসেবে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। বিভিন্ন মোবাইলে যে ভিডিওগুলো শেয়ার করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে তার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে।