টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে হঠাৎ করেই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় ৪ মাদ্রাসা ছাত্রী। জানা যায়,২৮ জুলাই টিকা দেওয়ার কথা বলে সকাল ৯ টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন তারা । দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় ভেঙ্গে পড়ে তাদের পরিবার। আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি খোঁজ নিলেও কোন সন্ধান মেলে না তাদের। তারপর পরিবার থেকে ফোন করা হয় ৯৯৯ নম্বরে।
৯৯৯ থেকে বিষয়টি অবগত করা হয় থানায়। পুলিশ একদিন পর ছাত্রীদের উদ্ধার করে জানতে পারে টিকটক সেলিব্রেটি হতে ঘর ছেড়েছিল তারা। ঘরে ফেরার চিন্তা ভাবনা ছিলনা তাদের। ওই চার শিক্ষার্থীর বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শহরগোপীনপুর গ্রামে। তারা স্থানীয় একটি মাদ্রাসার চতুর্থ, পঞ্চম,অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ৩০ জুলাই রাতে দুই শিক্ষার্থীর বাবা জাহাঙ্গীর আলম চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করলে ভালুকা উপজেলার তালটিয়া গ্রামের ফয়জুল হকের ছেলে মো.মাসুম ওরফে শান্ত (২০) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।
ঘাটাইল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু সালাম মিয়া জানান, ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে শুরুতে তারা ওই ছাত্রীদের বাড়ি যান। ছাত্রীদের অভিভাবকরা জানান তাদের মেয়েরা কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেনা। সবসময় পর্দা করে এবং বোরকা পড়ে চলে। ওসি জানান, ওই ছাত্রীদের মধ্যে দুইজনের বাবা প্রবাসী। আর মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলমের দুই মেয়ে। প্রবাসী অভিভাবকদের দুই মেয়ের মায়ের স্মার্টফোন ঘেটে দেখা যায় টিকটকে অভ্যস্ত ছিল ওই দুই মেয়ে। পাশের বাড়ির একজনের থেকে একটি মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়। মোবাইল ফোনে কল করলে কেউ একজন রিসিভ করে,কিন্তু কোথায় আছে তার কোনো তথ্য না দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখে। এভাবেই রাত কেটে যায়। তিনি জানান পরেরদিন আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। ফোন খোলা পেয়ে নম্বরটি টেকিং করা হয়। অবস্থান দেখায় ময়মনসিংহ বিভাগের ভালুকা উপজেলায়।
ভালুকা থানার সহযোগীতা নিয়ে ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩০ জুলাই রাত দেড়টার দিকে উদ্ধার করা হয় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির দুই ছাত্রীকে। জিজ্ঞাবাদ করলে কিছু বলে না তারা। পরে দেহ তল্লাশি করলে তাদের পরিহিত সেলোয়ারের গোপন পকেট থেকে একটি বাটনফোন উদ্ধার করা হয়। ওই ফোনে মেলে কিছু নম্বর। ওই নম্বরগুলো ঘেটে সম্প্রতি ফোনে কথা বলা নম্বরে ফোন করা হয়। পুলিশ তাদের খুঁজেতেছে যেকোনোভাবে এ বিষয়টি টের পেয়ে যায় অন্য দুই ছাত্রী। তারা ফোন থেকে সিম পরিবর্তণ করে ফেলে। ওসি জানান, ওই নম্বরটি টেকিংয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘক্ষণপর নম্বরটি সচল হলে ব্যবহারকারীর অবস্থান চলে আসে। মোবাইলটি ব্যবহার করে শান্ত নামে একজন।
তার বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায় না। পুলিশ উথুরা বাজার থেকে খুঁজে বের করে শান্তকে। শান্তর দেওয়া তথ্যমতে ভালুকা উপজেলার সোনাখালি গ্রামের জহিরুল ইসলাম ওরফে কসাই জহিরের বাড়ি থেকে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ওই দুই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। ওসি মোহাম্মদ আবু সালাম মিয়া বলেন, থানায় এনে ছাত্রীদের বাড়ি ছাড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলে, মোবাইল ফোনে মো.মাসুম ওরফে শান্তর মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। মূলত টিকটক সেলিব্রেটি হতেই তারা বাড়ি ছেড়েছিল।
এদিকে থানায় চারজনের বিরুদ্ধে করা অপহরণ মামলার উল্লেখ করা হয়েছে টিকটক করার মাধ্যমে মাসুম ওরফে শান্তর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় হয়। আদান প্রদান হয় মোবাইল নম্বর। শান্ত টিকটকে অভিনয় করার প্রলোভন দেখায় তাদের। ঘটনারদিন শান্ত ওই ছাত্রীদের শহরগোপীনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে রাস্তায় যেতে বলে। শান্ত ও অন্যান্য আসামীরা মিলে সিএনজিযোগে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে।
ঘাটাইল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বলেন, উদ্ধারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েগুলো জানায় টিকটক সেলিব্রেটি হতেই মূলত ঘর ছেড়েছিল তারা। বাড়ি আর ফিরবে না এ পরিকল্পনাও ছিল তাদের। মেয়েদের ভাষ্য, গার্মেন্টে চাকুরি করে জীবন পার করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। থানায় অপহরণ মামলা হয়েছে মূল আসামীকে গ্রেপ্তার করে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামী ভালুকা উপজেলার তালুটিয়া উত্তরপাড়া গ্রামের আনজু হোসেনের ছেলে মো. রাজীব (২২) ও আব্দুল খালেকের ছেলে মোফাজ্জাল হোসেন (২৪) এবং সোনাখালি পশ্চিম পাড়া গ্রামের আবুল বাতেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরফে কসাই জহিরকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।