ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপসহ সকল ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল। দিনে দুইটি করে তিন দিনের জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে ভেসে গেছে নিঝুমদ্বীপের জীববৈচিত্র চিত্রা হরিণ, পুকুরের মাছ, গবাদীপশু, মানুষের ঘরবাড়ি। ভিটেমাটি হারিয়ে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে অনেক পরিবার।
জোয়ার তীব্রতায় ভেঙ্গে গেছে মানুষের চলাচলের পাকা ও কাঁচা রাস্তা। বহু জায়গায় রাস্তা ভেঙ্গে খালে পরিণত হয়েছে। চলাচলে এখনো দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের। উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, প্রায় ১শত কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তা, ৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, ২শত তেরটি গবাদীপশু, ছোটবড় প্রায় ৭ শত পুকুর তলিয়ে যাওয়া সহ ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এবারের ঘূর্ণিঝড়টি দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি এবং বাতাসের তীব্রতা বেশি থাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। নিঝুমদ্বীপ চরগাসিয়া ও ঢালচরে বেড়িবাঁধ না থাকায় ৭-৮ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে মানুষের ঘরবাড়ি সহ ঘরের আসবাবপত্র ভেসে গেছে।
হরণী ইউনিয়নের নতুন ভাবে বসতি গড়ে উঠেছে চরঘাসিয়া চরে। এখানে প্রায় ১৭ হাজার লোকের বসবাস। গত ১০ বছর ধরে এখানে মানুষ বসবাস করছে। বেড়ীবাঁধ না থাকায় গত রাতের ৮ফুট জোয়ারে অনেকের ঘরবাড়ী ভেসে গেছে। ঘর বাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেকে।
চরঘাসিয়া জনতাবাজার সমাজের সভাপতি তৈমুর হোসেন জানান, জোয়ারের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, মানুষের নতুন তৈরি করা ঘর ও ভেসে যায়। অনেকে ঘরের চালের উপর উঠে আশ্রয় নেয়। রাতের একটার দিকে আসা জোয়ারে নিরুপায় হয়ে অনেকে বাড়ী ঘর ছেড়ে এসে সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের আশ্রয় নেয়। সকালে এসে দেখে জোয়ারে বসত ঘরটি ভিটা থেকে ভেসে গিয়ে জমিতে পেলেছে। ঘরের মালামাল ভেসে চলে গেছে আর কিছু একেক জায়গায় পড়ে আছে। অনেক বাড়ীতে শুন্য ভিটা পড়ে আছে।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন জানান, এই দ্বীপের চার পাশে বেড়ীবাঁধ না থাকায় গত দুইদিন দিনে ও রাতে ১০ফুট উচ্ছতায় দুবার করে প্লাবিত হয়েছে সবকটি গ্রাম। কিছু কিছু জায়গায় পানি নেমে গেলেও অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানির স্রোতে নামার বাজার থেকে মোক্তারিয়া ঘাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার প্রধান সড়কের অনেক অংশ ভেঙ্গে খালে পরিনত হয়েছে। এসব অংশ দিয়ে মানুষের জরুরী প্রয়োজনে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, নিঝুমদ্বীপের দক্ষিন ও পূর্ব অংশে জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে অনেকের ঘরবাড়ি, গবাদীপশু। ভেসে গেছে বনের হরীণ। এছাড়া প্রায় একশত কিলোমিটার কাঁচা সড়ক জোয়ারের স্রোতে ভেঙ্গে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।
এছাড়া জোয়ারের স্রোতে ও ঢেউয়ের আঘাতে নলচিরা ইউনিয়নের বেড়ীবাঁধের বাহিরে ঘাট এলাকায় প্রায় ১৫টি দোকান ঘর পানিতে ভেসে গেছে। নলচিরা ঘাটের দোকানের মালিক সাদ্দাম হোসেন জানান, চোখের সামনে নিজের দোকান ঘরটি ভেসে যায়। ঢেউয়ের কারনে মালামাল চেষ্ঠা করেও রক্ষা করা যায়নি। তার মত আরো অনেকের দোকান ঘর ভেসে গেছে। তবে অনেকে ভেসে যাওয়া ঘরের বিভিন্ন অংশ দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছেন কিন্তু মালামাল রক্ষা করা যায়নি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, হাতিয়ায় ঘূর্ণীঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতির একটি বিবরণ ত্রান মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে হাতিয়াতে প্রায় ৫০ হাজার লোককে ক্ষতিগ্রস্থ দেখানো হয়েছে। ৩ হাজার ৫শত পরিবারের ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির বিবরনে প্রায় একশত কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। দু-একদিনের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।