
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, চলতি মাসের মধ্যে আদানীর বকেয়া বাবদ ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হবে।
তিনি বলেন, আদানির সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আদানির দুর্নীতির বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট হয়েছে। সেগুলোকে মাথায় রেখে আমরা অন প্রটেস্ট আংশিক পেমেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ভারতীয় কোম্পানি আদানির বকেয়া বাবদ বকেয়া বিল পেমেন্টের দাবিতে বাংলাদেশকে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। বকেয়া ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার না পেলে ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে কোম্পানিটি। জানা গেছে, আদানীর বিষয়ে সোমবার বেশ কয়েকটি মিটিং হয়।
নভেম্বর মাসের শুরুতে বকেয়া পেমেন্টের জন্য চিঠি দিয়ে আল্টিমেটাম দেয়। এতে বকেয়া ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার ১০ নভেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়। চিঠিতে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির ধারা ১৩.২ (১) এবং (২) উদ্ধৃত করে, আদানি পাওয়ার বলেছে, বিপিডিবি বকেয়া পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত করার অধিকার পেয়েছে। যদি ১০ নভেম্বরে মধ্যে সমস্ত বকেয়া পরিশোধ না করা হয়, তাহলে ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত করা ছাড়া আমাদের আর কোন বিকল্প থাকবে না।
আদানি তার চিঠিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলেও, স্থগিতের ঠিক আগে নির্ভরযোগ্য ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পাওয়ার অধিকার তাদের থাকবে বলে উল্লেখ করেছে।
বকেয়ার পরিমাণ নিয়ে বাংলাদেশ এবং আদানির মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। আদানি ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার বকেয়া দাবি করলেও বাংলাদেশ বলছে ২৬২ মিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে কয়লার দাম এবং বিলম্ব জরিমানা ইস্যু জড়িত। আদানি কয়লার আন্তর্জাতিক দর অনুযায়ী দাবি করলেও বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী দর কষে যাচ্ছে। এখানে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।
ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি গ্রুপের ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। যা চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হয়ে বাংলাদেশে আসে। আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে গড়ে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় ২০২৩ সালের মার্চে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু হয় জুনে।
২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি করে পিডিবি। চুক্তি অনুসারে আদানি গ্রুপের কোম্পানি আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনে নেবে পিডিবি।
আদানির ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চুক্তি নিয়ে অনেক দিন ধরেই নানান কথা হচ্ছে। বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তদন্ত করে চুক্তিতে অনেক অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেছে। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আদানির চুক্তিতে যদি কোন রকম অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে বাতিল করতে দ্বিধা করবো না। মুখের কথা আদালত মানতে চাইবে না, যথাযথ কারণ থাকতে হবে।