চারিদিকে রাজনৈতিক হিংস্রতা


শেখ রিফাদ মাহমুদ প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ৭:৪৬ অপরাহ্ণ /
চারিদিকে রাজনৈতিক হিংস্রতা
চারিদিকে রাজনৈতিক হিংস্রতা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চারিদিকে চলছে কথা লড়াই। দলগুলোর ভেতরেও চলছে আন্তঃকোন্দল। আন্তঃকোন্দল শুধু যে মুখে মুখে তা নয়, এ যেনো চরিত্রহননের খেলা। জাতীয় নির্বাচনের সময় যতো ঘনিয়ে আসছে এ খেলা যেনো ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের প্রায় প্রতিটি জায়গায় দেখা যাচ্ছে, এমপির সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়রের স্নায়বিক দ্বন্দ। নির্বাচন কেন্দ্র করে এ দ্বন্দ যেনো আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

রাজনীতি পরিবর্তনশীল, যেকোনো সময়ে যেকারোও পদ-পদবীর পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে নেতারা এ বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছেনা। অনেকের কাছে পদ-পদবী পারিবারিক সম্পত্তি। কিন্তু নির্বাচন যতো ঘনাচ্ছে গিরগিটির মতো এসব হিসাব-নিকাশ ততোই পরিবর্তিত হচ্ছে।

বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বেশ হিংস্রতা দেখা যাচ্ছে। তবে এসব হিংস্রতার জন্য দায়ী অতি উৎসাহী কর্মী। অনেকটা গায়ে পড়েই যেনো দ্বন্দের সৃষ্টি করা হচ্ছে। বড় নেতারা হয়তো এসব চাননা, কিন্তু কর্মীরদের এমন উৎসাহী উশৃংখল আচরণ বেড়েই চলছে। প্রতিপক্ষের রক্ত ঝড়াতে যেনো তাদের এক অন্যরকম শান্তি। বিরোধীদলীয় রোজাদার রাজনৈতিক কর্মীকেও রক্তাক্ত জখম করা হচ্ছে। এই রক্ত ঝড়ানো শুধু যে প্রতিপক্ষের ওপরই সীমাবদ্ধ তা নয়। নিজ দলের মধ্যেও এমন রক্ত ঝড়ানো রাজনীতি চলছে।

হিংস্রতা থেকে সংবাদমাধ্যম ও ছাড় পাচ্ছেনা। কোনো কিছু অপছন্দীয় হলেই আক্রোশের শিকার হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীরা। শুধু আক্রোশই নয় সাথে রয়েছে নির্যাতন ও হয়রানি। এগুলো কোনো দলের নির্দেশে হচ্ছেনা, হচ্ছে কতিপয় অতিউৎসাহী রাজনৈতিক কর্মীর দ্বারা। কর্মীরা তাদের ওপরের নেতার কাছে বিশাল হ্যাডামওয়ালা সাজতেই এমন কান্ড ঘটাচ্ছেন। যদিও কর্মীদের এমন কান্ডের দায় দলের ওপরেই চলে আসছে। আপাত দৃষ্টিতে এসব অতিউৎসাহী কর্মীদের জন্যই দল বিতর্কিত হচ্ছে, যার দরুণ গ্রহণযোগ্যতা কমছে।

সুবিধাবাদী নেতারা সুযোগ বুঝে রাজনৈতিক বিভিন্ন ভাইদের অদল-বদল করছেন। মুহুর্তেই পল্টি নিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করছেন। এসব সারাদেশের চিত্র। ‘যার কর্মীরা যত বেশি প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ করতে করতে পারবেন, তার মনোনয়ন পাওয়ার চান্স যেনো ততোই বেশি’ এটিই যেনো সকলের এক প্রকার মানসিক ধারণা।

ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি সাময়িক সময়ের জন্য শক্তি জানান দিলেও একজন নেতার কি পরিমাণ ধ্বংস ডেকে আনে তা নেতারা অনুভব করতে পারেনা। ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির কারণে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের আস্থা হারালেও, তারা এগুলো কিছুতেই বর্জন করতে পারছেনা। ভাবখানা এমন, ক্যাডাররাই যেনো রাজনীতির নিয়ন্ত্রক।

বড় দলগুলোর মধ্যে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বেশ আক্ষেপ রয়েছে। যারা যত নির্যাতিত হয়েছে, তাদের মূল্য যেনো ততোই কমেছে। রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসা লোকজনই সবকিছু বাগিয়ে নিচ্ছে। ত্যাগীদের কপালে জুটছে বঞ্চণা। এসব বিষয় আগামী নির্বাচনের জন্য বড় ফ্যাক্টর হতে পারে।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে কিশোরদের দিয়ে নানা ধরনের  অপরাধ কার্যক্রম করানো হচ্ছে । অস্ত্রবাজি, মাদক ও হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কথা আমরা প্রায়শই পত্রিকার পাতায় দেখতে পাচ্ছি। কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এসব কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের ওপর রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

২০২৩ সালের এসে দেশের রাজনীতির মাঠে বিভেদ-বিভক্তি, হিংসা-বিদ্বেষ, হামলা-মামলার বেশ প্রগাঢ় চিত্র খুব স্পষ্টভাবেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সন্ত্রাস দমনের মানে উল্টো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করা, চোর ধরতে যেয়ে অনেকটা চুরি করার মতোই।

শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলে আসছে,সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ। অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবেই নির্বাচন হবে। সংবিধান থেকে ‘এক চুলও নড়চড় হবে না, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা হবে’। তবে বিএনপিও তাদের তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবিতে অটল। হামলা-মামলা সহ্য করেও তারা তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য এগোচ্ছে।

জনগণের জন্য যে রাজনীতি, সে রাজনীতির কারণে কারো রক্ত ঝড়ুক এটি আমাদের কাম্য নয়। অতিউৎসাহী কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সহিংসতা কমিয়ে আনতে হবে। প্রতিরোধের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া উচিত। ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি বর্জন করে জনগণের সাথে মিশে রাজনৈতিক নেতারা জনবান্ধব রাজনীতিতে মনোনিবেশ করুক এটাই প্রত্যাশা।

শেখ রিফাদ মাহমুদ, উপদেষ্টা পর্ষদ সদস্য, গ্লোবাল স্টুডেন্ট ফোরাম। প্রকাশক, বাংলাদেশ চিত্র