চিঠির যুগ শেষ, ডাক বিভাগের কাজ কী

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর), বিশ্ব ডাক দিবস। ১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের বার্ণ-এ ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নে (ইউপিইউ) এর যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার এই দিনটির স্মরণে বিশ্বের ১৯২টি দেশ প্রতিবছর এই দিবসটি পালন করে থাকে। বিশ্ব ডাক দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জনগণের জন্য ডাক: স্থানীয় পরিষেবা, বিশ্ব পরিসর’।

বাংলাদেশ ডাক দেশের অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। একসময় দেশব্যাপী এর ছিল বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। ডাক বিভাগই ছিল একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। কালের বিবর্তনে দূর-দূরান্ত থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়া হাতে লেখা চিঠি বিলি করার সেই দিন আর নেই। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো ডাক বিভাগের কাজ কী?

স্থানীয় জনগণের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ও সেবা প্রদান

চিঠির যুগ শেষে আধুনিক সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে বর্তমানে ডিজিটাল সেবাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ ডাক বিভাগ। যা সম্পর্কে অনেকেই অবগত নয়। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হলো:

বর্তমানে ডাক এর আওতাধীন ৯,৮৪৮টি ডাকঘর রয়েছে, যার মধ্যে ৪টি জিপিও, ২৩টি ‘এ গ্রেড’ পোস্ট অফিস, ৪৫ টি ‘বি গ্রেড’ পোস্ট অফিস, ৪০৮টি উপজেলা পোস্ট অফিস, ৯৩০টি সাব পোস্ট অফিস এবং ৮,১০৯টি শাখা ডাকঘর অন্তর্ভুক্ত। এই ডাকঘরগুলোর মাধ্যমে ডাক বিভাগ শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত, দুর্গম অঞ্চলগুলো পর্যন্ত ডিজিটালভাবে সেবা প্রদান করছে।

ডাক সেবা প্রদানের জন্য বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার জনবল রয়েছে। প্রতিটি ডাকঘর জনগণের জন্য বহুমুখী সেবাদান কেন্দ্র, যেখানে পত্র আদান-প্রদান, সঞ্চয় সেবা, মানি অর্ডার, পার্সেল ডেলিভারিসহ প্রায় ২০ ধরনের সেবা দেওয়া হয়। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ কোটি ডাকদ্রব্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ডাকঘরগুলোর মাধ্যমে বিলি করা হয়।

অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অগ্রযাত্রা

ই-কমার্স ডেলিভারি, ইলেকট্রনিক মানি অর্ডার (ইএমও) এবং ডাকঘর সঞ্চয় সেবার মাধ্যমে ডাকঘরগুলো নিশ্চিত করছে যাদের সরাসরি ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার নেই, তারাও যেন নির্বিঘ্নে ডিজিটাল বিপ্লবে অংশ নিতে পারে।

বৈশ্বিক যোগাযোগের সেতুবন্ধন জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ডাক নেটওয়ার্ক ও আধুনিক ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশ ডাক নাগরিকদের আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতার প্রতীক। বিশ্বব্যাপী ১৯২টির অধিক দেশে পত্র, পণ্য, পার্শ্বেল পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দায়িত্ব পালন করছে এবং এর মাধ্যমে একটি বৈশ্বিক যোগাযোগের সেতু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ)-এর সদস্যপদ লাভের পর থেকে বৈশ্বিক ডাক অঙ্গনে একটি সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। ইউপিইউ-এর চারটি প্রধান সংস্থার মধ্যে দুটি কাউন্সিল অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএ) এবং পোস্টাল অপারেশনস কাউন্সিল (পিওসি)-এ বাংলাদেশের নিয়মিত অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক ডাক নীতিনির্ধারণে দেশের ভূমিকা সুদৃঢ় করেছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৮ বার ‘সিএ’ নির্বাচনে এবং ৬ বার ‘পিওসি’ নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেছে। সর্বশেষ ২০২৫ সালে দুবাই কংগ্রেসে বাংলাদেশ আবারও ‘সিএ’ সদস্যপদ লাভ করে। এটি সিএ এর সদস্যপদে বাংলাদেশের পর পর দ্বিতীয় বিজয়।

বাংলাদেশ ডাক: ডিজিটাল বিশ্বে একটি বিশ্বস্ত ও আধুনিক অংশীদার

পরিবর্তনশীল ডিজিটাল বিশ্বে নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ নিরন্তর উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি নাগরিককে সত্যিকারের বৈশ্বিক নাগরিকে রূপান্তরিত করতে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ করতে, বাংলাদেশ ডাক গর্বের সঙ্গে নিম্নের অত্যাধুনিক ও নির্ভরযোগ্য সেবাগুলো প্রদান করছে।

ডাক বিভাগের বর্তমান প্রধান সেবাগুলো হলো- রেজিস্টার্ড চিঠিপত্র, জিইপি, এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস (ইএমএস), ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (ইএমটিএস), পার্সেল সার্ভিস, ডিপিপি, ভিপিএল, ডাকটিকিট বিক্রয়,  ডাক জীবন বীমা এবং আর্থিক সেবা।

আর্থিক সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিরাপদ সঞ্চয় স্কিম, সঞ্চয়ী ব্যাংক, ডাক জীবন বিমার মতো ঐতিহ্যবাহী এবং ‘নগদ’ এর মাধ্যমে মোবাইল/ডিজিটাল আর্থিক সেবাসহ সব ধরনের আধুনিক আর্থিক সমাধান এখন নিকটস্থ ডাকঘরে।

বাংলাদেশ ডাক-এর উদ্যোগে নাগরিকদের দোরগোড়ায় সরকারি সুবিধা:

নাগরিকদের জন্য সরকারি সেবা প্রাপ্তি আরও সহজ এবং ঝামেলামুক্ত করতে বাংলাদেশ ডাক প্রবর্তন করছে বেশ কিছু যুগান্তকারী নতুন সেবা। নিকটস্থ ডাকঘরের মাধ্যমেই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ডাকযোগে ভূমি সেবা, ডাকযোগে পাসপোর্ট সেবা, ডাকযোগে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা এবং ডাকযোগে ড্রাইভিং লাইসেন্স সেবা।

পোস্টাল ব্যালট এক ঐতিহাসিক অগ্রযাত্রা

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ডাক একটি যুগান্তকারী সেবার ঘোষণা করছে। বাংলাদেশ ডাক প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নিরাপদ পোস্টাল ব্যালট সেবা চালু করছে। এর মাধ্যমে প্রায় ১.৩০ কোটি যোগ্য প্রবাসী ভোটার সরাসরি ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। এটি শুধু ডাক সেবা নয়, বরং গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করার এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যেখানে স্থানীয় ডাকঘর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা নাগরিকদের ভোটাধিকারের সেতুবন্ধন তৈরি করছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য অর্জন নিয়ে যা বলছে ডাক বিভাগ

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডাক বিভাগ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে বলে জানিয়েছে ডাক অধিদফতর। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভ্যন্তরীণ ডাকসেবাগুলো হলো:

১.ডাক বিভাগের প্রায় ১০ হাজার ডাকঘর দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় কার্যকর ডিজিটাল সার্ভিস হাব হিসেবে কাজ করছে, যেখানে প্রায় ১৮ হাজার কাউন্টারে বছরে প্রায় ৫ কোটি ডাকদ্রব্য প্রসেস করা হয়।

২. দেশব্যাপী ১৭০টি প্রান্তিক পৌর এলাকার ১০ লক্ষাধিক ঠিকানায় ২৫ লক্ষাধিক ই-কমার্স পণ্য পৌঁছানো হয়েছে।

৩. এ পর্যন্ত ১৫ লক্ষাধিক নাগরিকের ঠিকানায় তাদের জমির পর্চা ও মৌজা ম্যাপ, ১০ লক্ষাধিক নাগরিকের ঠিকানায় নতুন ইস্যুকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্স বিলি করা হয়েছে।

৪. কেন্দ্রীয়ভাবে প্রিন্টেড ৬ কোটির অধিক স্মার্ট কার্ড দেশের সব উপজেলায় ডাক সেবার মাধ্যমে বিলি করা হয়েছে।

৫. পাশাপাশি বছরে ৩৬ লক্ষাধিক টেলিফোন বিল নাগরিকদের ঠিকানায় বিলি করা হচ্ছে।

৬. গত অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ মোট ইস্যুকৃত চিঠিপত্র ও ডকুমেন্টের প্রায় ৮০ শতাংশ ডিএমএস (ডমিস্টিক মেইল মনিটরিং সফটওয়ার) সফটওয়‍্যারের মাধ্যমে ইস্যু ও সর্টিং সম্পন্ন হয়েছে।

৭. বর্তমানে মোট বিলিযোগ্য পোস্টাল আর্টিকেলের প্রায় ৫০ শতাংশ ডিএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিলি করা হচ্ছে এবং চিঠিপত্রের ইস্যু ও বিলি শতভাগ ডিএমএস-এর আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলমান।

আন্তর্জাতিক ডাকসেবা

ডাক অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩৪৫ টন ডাকদ্রব্য দেশের অভ্যন্তরে বিলির পাশাপাশি ৫৮৬ টন ডাকদ্রব্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

ডাক অধিদফতরের বাংলাদেশ ডাক কেবল প্রতিনিধিত্বই নয়, বরং একাধিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

১. বাংলাদেশ পোস্ট $৫৮ এবং $৫৯ মানদণ্ড অনুযায়ী নিরাপত্তা মানদণ্ডে ২০২৫ সালে লেভেল এ গোল্ড ক্যাটাগরিতে নিরাপত্তা সনদ অর্জন করেছে।

২. ইউপিইউ-এর ‘স্টেট ফর দ্য পোস্টাল সেক্টর ২০২৫’ প্রতিবেদনে সমন্বিত ডাক উন্নয়ন সূচকে (২আইপিডি) বাংলাদেশ পোস্ট পিডি স্তর ৭ অর্জন করেছে। ৫৯.০ স্কোরের সঙ্গে দেশের ডাক ব্যবস্থা বৈশ্বিক গড় ৫০.৮-এর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী, যা উচ্চ-মধ্যম স্তরের অপারেটর হিসেবে চিহ্নিত করে। নির্ভরযোগ্যতা (৭৪.৮) ও স্থিতিস্থাপকতা (৮৯.২) বিবেচনায় বাংলাদেশের পারফরম্যান্স শক্তিশালী অবস্থান প্রদর্শন করে।

৩. ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক ডাক বিনিময়ে ‘ডাটা এক্সচেঞ্জ’ কার্যক্রমে বাংলাদেশ ১৮৯টি দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। বাংলাদেশ ৯৬.৪৯ শতাংশ কমপ্লায়েন্স বজায় রেখে এই উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে, যা কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং ই-কমার্স লজিস্টিকসে দেশের দক্ষতা প্রমাণ করে।

৪. বাংলাদেশ পোস্ট এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস (ইএমএস) কাস্টমার কেয়ার অ্যাওয়ার্ড এর গোল্ড ক্যাটাগরিতে ২০২২ ও ২০২৩ সালে পরপর দুই বছর অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে।

৫. কোয়ালিটি অব সার্ভিস ফান্ড এর অধীনে বাংলাদেশ পোস্ট ডেলিভারি কার্যক্রমের জন্য ৫০টি ই-বাইক লাভ করে, যা পরিবেশবান্ধব লজিস্টিকস বা গ্রিন লজিস্টিকস বাস্তবায়নে দেশের প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক।

অবকাঠামো ও লজিস্টিকস

সম্প্রতি, দেশের ২৭টি নতুন জেলা ডাকঘর নির্মাণ এবং ১০০টি উপজেলা ডাকঘরের সংস্কারের মাধ্যমে সারা দেশে ডাকসেবার ভৌত অবকাঠামো আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। সেবা আরও দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে মেইলগাড়ি, মোটরসাইকেল ও অন্যান্য ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। ফলে গ্রামীণ ও শহরে পর্যায়ে ডাকদ্রব্যের প্রেরণ ও বিতরণ আরও সুনির্দিষ্ট এবং সময়মতো সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।

কৃষি ও ব্যবসায় সেবা

ভোক্তাদের দোরগোড়ায় মৌসুমি ফল যেমন- আম, লিচু, আনারস সরাসরি পৌঁছে দিয়ে ডাক বিভাগ কৃষি ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ বছর বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমে ৪৫ টন আম সরাসরি ভোক্তার দোরগোড়ায় সরবরাহ করেছে। একইসঙ্গে ক্ষুদ্র উৎপাদকদের জন্য নতুন বাজার সংযোগের ব্যবস্থা এবং সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে উৎসাহিত করছে ডাক বিভাগ।

এই উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের ডাক সেবাকে কেবল যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে নয়, বরং একটি কার্যকর ডিজিটাল ও লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে তুলছে, যা দেশের সব নাগরিকের জন্য আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য সেবা নিশ্চিত করছে।

ডাক বিভাগের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে ডাক অধিদফতরের পরিচালক কবির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভবিষ্যৎ পথ চলায় বাংলাদেশ ডাক বিভাগের বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। একই সাথে অনেক চ্যালেঞ্জের কথাও জানান তিনি। চ্যালেঞ্জ গুলো হলো, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ও গ্রাহক চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলা, আন্তর্জাতিক ডাক সার্ভিস প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং প্রযোজনীয় জনবল এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো হলো:

১. ই-কমার্স সেবার সম্প্রসারণ-দেশি ও আন্তর্জাতিক অনলাইন ব্যবসায় পণ্য সরবরাহে নির্ভরযোগ্য পার্টনার হিসেবে ডাক বিভাগকে গড়ে তোলা।

২.আসন্ন নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে ডাক অধিদফতর।

৩. সেন্ট্রাল লজিস্টিকস ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম (সিএলটিপি) বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস খাতে আধুনিকীকরণ ও ডিজিটাল রূপান্তরের একটি আসন্ন জাতীয় উদ্যোগ। সরকার অনুমোদিত এই প্ল্যাটফর্ম ডাক অধিদফতরের অধীনে পরিচালিত হবে, যার মাধ্যমে পণ্য পাঠানো, ট্র্যাকিং, ক্যাশ অন ডেলিভারি এবং গ্রাহক অভিযোগ ব্যবস্থাপনা একীভূত কাঠামোয় আনা হবে। জাতীয় লজিস্টিকস নীতি ২০২৪-এর আলোকে এটি তথ্য সুরক্ষা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি ই-কমার্স, কুরিয়ার, পেমেন্ট গেটওয়ে ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বিত ডেটা এক্সচেঞ্জ তৈরি হবে।

৪. ৬ ধরনের কুইক উইন স্মার্টাইজেশন ও ডাইভারসিফিকেশনের লক্ষ্যে নাগরিক প্রান্তে বিদ্যমান ডাকসেবার সম্প্রসারণ ও সহজলভ্যকরণ।

৫. সার্ভিস অর্কিটেকচার, মেইল ফ্রেমওয়ার্ক, কোল্ড চেইন, অল্টারনেটিভ সার্ভিস ডেলিভারি।

৬. এআই ও অটোমেশন সংযোজন করে ডাক সেবার গতি ও মান বৃদ্ধি।

৭. আন্তর্জাতিক ডাক বিনিময়ে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করা।

ডাক বিভাগের কাজ, অগ্রগতি এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘বাংলাদেশ ডাক শুধু বার্তা বহনের মাধ্যম নয়-এটি জাতীয় উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সহযাত্রী। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ-ডাক বিভাগ: সেবাই আদর্শ।’

ডাক দিবস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডাক দিবসটি উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সেমিনার, র‍্যালি ও আলোচনা সভা, স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ, সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ ,স্মরণিকা প্রকাশ, শ্রেষ্ঠ কর্মীদের সম্মাননা, মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে সব গ্রাহকের কাছে এসএমএস পাঠানো, ফিলাটেলি মেলা, চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। এছাড়াও তিন দিনব্যাপী ডাকটিকিট প্রদর্শনী (৯-১১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে।’

জনগণকে আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘নিকটস্থ ডাকঘরের সেবা গ্রহণ করুন এবং আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় পাশে থাকুন।’

Share This Article