ফল আর সবজি উৎপাদনে বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে চুয়াডাঙ্গার। চুয়াডাঙ্গার মিষ্টি পান ও খেজুর গুড়ের সুনাম দেশজুড়ে। রাজধানীর বাজারে চুয়াডাঙ্গার ফুলকপি আর বাঁধাকপির কদর রয়েছে। সেই চুয়াডাঙ্গায় জনপ্রিয় হচ্ছে আধুনিক পদ্ধতিতে টমেটো চাষ। সেইসাথে হচ্ছে; বিদেশী ফল ও গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ। তবে, ইতোমধ্যে অনেকে নতুন পদ্ধতিতে শীতকালীন হাইব্রিড টমেটোর আবাদ করে সফল হয়েছেন। তারা টমেটো চাষে মালচিং পদ্ধতিও ব্যবহার করছেন। নতুন এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশের খুঁটি ও নাইলনের দড়ি। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে এরই মধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছেন চাষিরা। তাদের সাফল্য উৎসাহিত করেছে স্থানীয় চাষিদের।
কৃষকরা জানিয়েছেন, নতুন পদ্ধতিতে টমেটো চাষে বাড়তি কিছু খরচ হলেও গাছের পরিচর্যা অনেক সহজ হচ্ছে, ফল মাটি স্পর্শ না করায় পচন ধরছে না এবং ফসল তুলতে সুবিধা হয়।
জেলার জীবননগর থানার নিধিকুন্ড গ্রামের কৃষি উদ্যোগতা কৃষক তরিকুল ইসলাম। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। করোনাকালে চাকুরীতে সমস্যা হলে তিনি আধুনিক চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষিতে মনোনিবেশ করেন। একাজে তিনি সফলও হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার একদাগেই নিজস্ব ৫০ বিঘা জমি আছে। এই জমিতে আমি আমার চাচাসহ চাষবাদ করি। সবই হাই-ভ্যালু ক্রপ। বিশেষ করে অফ সিজনে যেগুলো অন্য কৃষক চাষ করেনা আমরা সেগুলো চাষ করি। বাণিজ্যিকভাবে চাষের ফলে সেগুলোতে লাভ ভালো হয়। যেমন; অফ সিজন টমেটো আমরা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলে মোটামুটি বিঘা প্রতি ৩-৪ লাখ টাকা লাভ হয়।’
‘আমাদের এ সব ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ সব সহায়তা দিয়েছেন। বিশেষ করে ডিডি স্যার এ বিষয়ে অত্যান্ত আন্তরিক’, বলেও জানান তিনি।
জানাগেছে, নিধিকুন্ডু ( গাঙ্গপাড়া) গ্রামের মো: ইদ্রিস আলী’র পুত্র মো: তরিকুল ইসলামের ৬বিঘা জমিতে ড্রাগন, ২বিঘা জমিতে মাল্টা ১৫ কাঠা জমিতে অ্যাভোকাডো, ১৪কাঠা জমিতে কদবেল, ৩ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ২ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, দেড় বিঘা জমিতে বর্ষাকালীন ফুলকপি ও ৪ বিঘা জমিতে আম বাগান আছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, কৃষি উদ্যোগতা তরিকুল ইসলামকে জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সকল সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যা যশোর অঞ্চলে টেকশই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শ্রীষ্মকালীন টমেটো প্রদর্শনী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রীষ্মকালীন টমেটো ও গ্রীষ্মকালীন পেয়াজ প্রদর্শনী, মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পলি শেড, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রীষ্মকালীন পেয়াজ প্রদর্শনী, লাভজনক পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো ও পেয়াজ উৎপাদন কর্মসুচির আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রীষ্মকালীন পেয়াজ প্রদর্শনী দেওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বিভিন্ন সময় শ্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন ট্যুরে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে তাকে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে এ জেলায় বর্ষাকালে মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এ পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে ফসল পরিষ্কার থাকে, পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়, সবজির লতা ও ফল মাটিতে লেগে থাকে না এবং সহজে সংগ্রহ করা যায়। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা মাচায় সবজি আবাদ করার ফলে অতিবৃষ্টিতেও তেমন ক্ষতি হচ্ছে না। বাজারেও মিলছে ভালো দাম। সবমিলিয়ে আর্ধিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে জেলা কৃষি অফিস চাষীদের বিভিন্ন পরামর্ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকরা জানান, অল্প পরিশ্রমে মাচায় সবজি চাষে তারা লাভবান হচ্ছেন সব দিক থেকে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘হাইব্রিড জাতের টমেটো গাছ সাধারণত বড় হয় ও চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। বাঁশের খুঁটি ও দড়ি দিয়ে মাচা করে দিলে সারি করে লাগানো গাছের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা থাকে। ফলে গাছের পরিচর্যা করা সুবিধা হয় ও পোকার আক্রমণ কম হয়। আর মাটির সঙ্গে ঠেকতে না পারায় ফসলে পচন ধরে না ও ফুল ফল নষ্ট হয় না। এমনকি টমেটো তুলতেও সুবিধা হয়। এতে ফলন বেশি পাওয়া যায়।’