সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাক চাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন (২৪) ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের একজন দক্ষ কর্মী। দুই বছরের চাকরি জীবনে দূরদর্শী কর্ম-দক্ষতায় তিনি ফায়ার সার্ভিস স্পেশাল টিমে স্থান করে নিয়ে ছিলেন। তার এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবার ও সহকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদরদফতর প্রাঙ্গণে ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা তার শেষ বিদায় জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন সবাই। সহকর্মীরা নিহত নয়নের কর্ম-দক্ষতার বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন। অশ্রুশিক্ত হয়ে পড়েন সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।
এরআগে দুপুরে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ফায়ার ফাইটার নয়নের মরদেহ জানাজার জন্য ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তফতরে আনা হয়। জানাজার আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ফায়ার ফাইটার নয়নকে শ্রদ্ধা জানান। এরপর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় বিদায় জানানো হয়।
জানাজা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গতকাল (বুধবার) আমাদের ফায়ার ফাইটার নয়ন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। আমরা সবাই তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। নয়নের বয়স খুবই কম ছিল। তিনি মাত্র দুই বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করেন। কর্তব্যরত অবস্থায় তিনি মারা যান, তার মা-বাবার যে কী অবস্থা সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। কিছুদিন আগে সিলেটে থেকে পোস্টিং হয়ে ঢাকায় এসেছেন। তিনি খুবই দক্ষ ফায়ার ফাইটার ছিলেন। তাই তাকে স্পেশাল টিমের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুক। আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে নয়ন ছিলেন ছোট।
গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আগুন লাগার পরেও ট্রাক কেন ওখান দিয়ে যেতে দেওয়া হলো, যে ট্রাকের ধাক্কায় ফায়ার ফাইটার মারা গেলেন। এটা ব্যর্থতা কিনা, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি বলবো ব্যর্থতাই। কারণ ট্রাক ওখানে চলাচল করতে দেওয়া উচিত ছিল না। তবে আমরা ট্রাক চালককে ধরে ফেলেছি। তাকে আইনের আওতায় অবশ্যই নিয়ে আসবো।
আগুন নেভাতে এত সময় কেন লাগলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগুন নেভাতে কোনটা কত সময় লাগবে, সেটাতো আমরা এভাবে বলতে পারবো না। সেটা আগুনের ওপর নির্ভর করে। এবং ফায়ার ফাইটারের গাড়ি যাওয়ার ওপরেও অনেকটা নির্ভর করে। পানি সরবারাহের ওপরও নির্ভর করে। এছাড়া বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতার ওপরও নির্ভর করে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। ১৯টা ফায়ার ইউনিট একসঙ্গে কাজ করে কন্ট্রোলের ভেতরে এনেছে।
আগুনের সূত্রপাতের বিষয় জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটা হাই পাওয়ার তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এই তদন্ত কমিটি খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত রিপোর্ট দিলে আপনারা জানতে পারবেন কেন এই আগুনের সূত্রপাত।
দুই উপদেষ্টা যারা আন্দোলনে প্রথম সারির সদস্য, তারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন এটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ষড়যন্ত্র হতে পারে— আপনার কাছেও এমন মনে হয় কিনা? উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তদন্তের আগে আমি কিছু বলতে পারবো না। যেহেতু আমরা তদন্তের জন্য টিম করে দিছি, সেহেতু তদন্ত শেষে আমরা বলবো।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে— বিকাল ৫টার পরে যেন সচিবালয়ে কেউ অবস্থান না করেন। তারপরেও এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা তো ঘটেছে রাত ১টার দিকে। ওই সময়ে ওই বিল্ডিংয়ে কেউ ছিলেন না। ওই ভবনের তিনটা ফটকই কিন্তু তালা দেওয়া ছিল। প্রত্যেকটা ফ্লোরে যার যার মন্ত্রণালয়েও তালা দেওয়া ছিল। একটা ফটক ভেঙে ফায়ার ফাইটারা ভেতরে ঢুকেছেন।
প্রাথমিকভাবে আপনারা আগুনের কোনও সূত্র পেয়েছেন কিনা— জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি একটা বললাম, পরে দেখা গেলো ওইটা প্রমাণিত হলো না। প্রমাণিত হওয়ার পরে বলাটা মনে হয় ভালো। আমি এখন কিছু বললে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে বলে ফেলবেন। একারণে আমি পুরোটা জানার পরে বলবো। আর এখানে এক্সপার্ট ওপিনিয়নেরও দরকার আছে। আমরা এখনও আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে পারিনি।