জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনে সাহসী, ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্স, বাংলাদেশ (সিজেএ-বি)।
আজ রবিবার ঢাকার একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানায় ৫০টির বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই জোট।
অ্যালায়েন্স জানিয়েছে, জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কনভেনশন (ইউএনএফসিসি)-এর অধীনে বৈশ্বিক জলবায়ু শাসনব্যবস্থা ধীরগতিতে চলছে এবং এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু কার্যক্রমকে যথাযথভাবে সহায়তা দিতে পারছে না। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, কপ-৩০ এই সংকট নিরসনের একটি বড় সুযোগ হতে পারে।
“কপ-৩০: একসাথে সিএসও অবস্থান নির্ধারণ” শীর্ষক অনুষ্ঠানে সিপিআরডি-এর সহকারী ব্যবস্থাপক শেখ নুর আতিয়া রাব্বি নাগরিক সমাজের দাবিগুলো উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আর ভবিষ্যতের হুমকি নয়, এটি ইতিমধ্যেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে। আলোচনায় আমাদের মানুষের কষ্ট ও সহনশীলতা তুলে ধরা উচিত। আমরা বিশ্বনেতাদের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারি না, যারা যুদ্ধের জন্য বিশাল অর্থ খরচ করে কিন্তু জলবায়ু মোকাবিলায় সহায়তা দিতে দ্বিধা করে। এটি নৈতিকতা ও ন্যায়ের বিষয়, যা কপ সম্মেলনের মূল দিক হওয়া উচিত।
সিপিআরডি-এর প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, কপ-৩০-এ মূল্যায়ন করতে হবে আমরা কি সত্যিই ১.৫°C লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে আছি কি না। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের প্রক্রিয়া এখনো ধীর, তাই উন্নত দেশগুলোর অর্থায়ন, প্রযুক্তি ও সক্ষমতা সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন (GGA) নিশ্চিত করবে যে, জলবায়ু অভিযোজন পদক্ষেপগুলো বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য সুফল বয়ে আনছে।
অ্যালায়েন্স আরও জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতার চেতনা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কপ-৩০ হতে হবে বৈশ্বিক সংহতি পুনর্গঠনের এক মঞ্চ। বিশ্বনেতাদের এখনই সাহসী ও যৌথ পদক্ষেপ নিতে হবে—আরও একবার ব্যর্থ হওয়া যাবে না।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের নুজহাত জাবিন, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের তালহা জামাল, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের হাসিন জাহান, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশের মানীশ কুমার আগরওয়াল, অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার বাংলাদেশের মোহাম্মদ আকমল শরীফ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুবর্ণা বড়ুয়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) উপসচিব ড. শাহ আব্দুল সাদী ও অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক এবং পিকেএসএফ-এর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ মতামত দেন।
সিজেএ-বি এর প্রধান দাবিগুলো হলো- “বাকু টু বেলেম রোডম্যাপ টু ১.৩টি”–এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সরকারি, অনুদানভিত্তিক ও স্বল্পসুদে অর্থায়ন নিশ্চিত করা, উন্নত দেশগুলোকে প্যারিস চুক্তির ধারা ৯.১ অনুযায়ী আর্থিক অঙ্গীকার পূর্ণ ও স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়ন করা।
এ ছাড়া আসন্ন এনডিসি ৩.০-এ ১.৫°C পথরেখার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রশমন লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং মিটিগেশন ওয়ার্ক প্রোগ্রাম শক্তিশালী করারও দাবি জানানো হয়।
গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন (জিজিএ)-এর জন্য কার্যকর সূচক কাঠামো চূড়ান্ত করতে হবে এবং তা বাড়তি অর্থ, প্রযুক্তি ও সক্ষমতা সহায়তার সঙ্গে সংযুক্ত করার কথাও উঠে এসেছে।
অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে লস অ্যান্ড ড্যামেজ-কে কোপের স্থায়ী আলোচ্যসূচি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং এনসিকিউজি-এর আওতায় দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিত করা,
কপ-৩০-এ জাস্ট ট্রানজিশন অ্যাকশন মেকানিজম গৃহীত হতে হবে, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষিত করা, এ ছাড়া শক্তিশালী জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান গৃহীত হওয়ার দাবি জানানো হয়েছে যাতে লিঙ্গসমতা, আদিবাসী অধিকার ও মানবাধিকার সব প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
