ডুমুরিয়া প্রতিনিধি
কৃষিতে অবদানের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়ার বাসিন্দা নবদ্বীপ মল্লিক। তাঁর বাড়ি উপজেলার বরাতিয়া গ্রামে। মাস তিনেক আগের অতিবর্ষণে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে তাঁর ড্রাগন ফলের বাগান। প্রায় এক বিঘা জমিতে গড়ে তোলা এ বাগানের পাশাপাশি পানিতে তলিয়ে মারা গেছে আম, কাঁঠাল, কলা ও পেয়ারা বাগানের গাছ। দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন নবদ্বীপ মল্লিক। তাঁর মতো ক্ষতির মুখে পড়েছে উপজেলার হাজার হাজার বাগানি ও কৃষক পরিবার। সব মিলিয়ে ডুমুরিয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে ৩ লক্ষাধিক ফলদ ও বনজ গাছ মারা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চলতি বছরের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডুমুরিয়া অঞ্চলে শুরু হয় অতিবর্ষণ, যা থেমে থেমে চলেছে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। আড়াই মাস ধরে এভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে উপজেলার ২২৬টি গ্রামের প্রায় ৭৫ ভাগ এলাকা তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। দীর্ঘ সময় ধরে পানি নামতে না পারায় ফলদ ও বনজ গাছগুলো ধীরে ধীরে মরতে শুরু করে। একই সঙ্গে ক্ষতির মুখে পড়ে হাজার হাজার হেক্টরের সবজি ক্ষেত, মৎস্য খামার, কাঁচা ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রামীণ সড়ক। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এবারের জলাবদ্ধতায় কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে বলে তারা অনুমান করছেন।
রংপুর বটবেড়া গ্রামের অখিল মণ্ডল এমনই একজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি। নিজ মাছের খামারের বাঁধের ওপর ছয় বছর আগে তিনি শতাধিক আম-কাঁঠাল ও অন্যান্য ফলের চারা রোপণ করেন। সব গাছেই ফলন আসে। এবারের বর্ষণে বাঁধ তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় সব গাছ মারা গেছে। অখিল মণ্ডলের ভাষ্য, লক্ষাধিক টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। পানি নামলে আবারও চারা রোপণ করতে হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যমতে, নভেম্বরের মাঝামাঝি উপদ্রুত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবুও প্রায় ৪৬ ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা রয়েছে। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে রংপুর, ধামালিয়া, রুদাঘরা, খর্নিয়া, আটলিয়া, মাগুরাঘোনা, গুটুদিয়া, ভাণ্ডারপাড়া, শোভনা, ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ ভাগ এলাকা এখনও তলিয়ে আছে। এসব এলাকার বসতভিটা, ব্যক্তিমালিকানাধীন ফলের বাগান, সরকারি অর্থায়নে নির্মিত সড়ক ও নদী-খালের পাশ ঘেঁষে যাওয়া বনজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মৎস্য ঘেরের বাঁধের ওপর রোপণ করা গাছও ডুবে গেছে। শিকড় থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ৩ লক্ষাধিক গাছ মারা গেছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লেবু, ড্রাগন ফল, জামরুল ও কলাবাগানে। শিকড় দুর্বল হয়ে গেছে নারিকেল, সুপারি, সজনে, শিরীষ, মেহগনি, ইপিল-ইপিল গাছের। এগুলো এখন মৃত্যুর মুখে।
ডুমুরিয়ার মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জিএম আমান উল্লাহ আমান শনিবার সমকালকে বলেন, গাছের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিবিড়। গাছশূন্য হলে পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। জলাবদ্ধতা নিরসনে এলাকার নদী-খাল খনন ও অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, না হলে প্রতিবছর হাজারো মানুষের ক্ষতি হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। ফলে চর্ম রোগ, ডায়রিয়া, আমাশয় ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে ডুমুরিয়াতে এমন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। জলাবদ্ধতার শিকার এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইনছাদ ইবনে-আমিন ও বন কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী খানের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, দ্রুত ফলের আশায় মানুষ কলমের গাছ রোপণ করেন। ছোট গাছে স্বল্প সময় অধিক ফলন পাওয়া যায়। এ কারণে বাড়ির আঙিনায়, ঘেরের বাঁধ ও সড়ক ঘেঁষে বাগান করছেন কৃষকরা। আড়াই মাসের বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ৩ লক্ষাধিক গাছ মারা গেছে। প্রকৃত ক্ষতির চিত্র জানতে মাঠের সার্ভে চলছে।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, সেচযন্ত্রের সাহায্যে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। দ্রুত পানি নেমে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :