প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে বিশিষ্ট বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস, চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাচেলেটে এবং উরুগুয়ের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও লুবেটকিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রফেসর ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে অংশগ্রহণের পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তাদের সংক্ষিপ্ত আলাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত সংস্কার, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশে আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন এবং অস্ট্রেলিয়ায় ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংখ্যাসহ মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রফেসর ইউনূস ফেব্রুয়ারির শুরুতে অনুষ্ঠেয় দেশের ইতিহাসের ‘অন্যতম স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন’ আয়োজনে তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, নির্বাচনি প্রক্রিয়ার সততা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ অস্ট্রেলিয়ায়, বিশেষ করে তার নির্বাচনি এলাকায় বাংলাদেশি কমিউনিটির ক্রমবর্ধমান অবদানের কথা উষ্ণ ভাষায় তুলে ধরেন। তিনি বেশ কয়েক বছর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা স্মরণ করেন।
পরে প্রফেসর ইউনূস নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের বিশেষ পরামর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আলোচনায় বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথ-এ স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
জীবন ও স্বাস্থ্যবিমা, দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় এবং পেনশন প্রকল্পসহ আর্থিক ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের বিষয়গুলো নিয়ে তারা আলোচনা করেন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তকরণের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। প্রফেসর ইউনূস মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় ঋণ গ্রহণের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি গ্রামীণ নারীদের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা পেশাদারদের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরীক্ষা ব্যবহারের প্রস্তাব দেন, যা অগণিত জীবন বাঁচাতে পারে।
সাক্ষাৎকালে প্রফেসর ইউনূস বৈশ্বিক ওষুধশিল্পের পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়ে আরও ওষুধ প্রস্তুতকারকদের সামাজিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘সামাজিক ব্যবসার ওষুধ প্রস্তুতকারকদের উৎপাদিত ভ্যাকসিন সাশ্রয়ী মূল্যে থাকবে।’
প্রধান উপদেষ্টা রানি ম্যাক্সিমাকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। অরেঞ্জ রাজকুমারী ক্যাথারিনা-আমালিয়াও এই বৈঠকে যোগ দেন।
প্রফেসর ইউনূস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুসের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন অগ্রাধিকারের বিষয় এবং সাম্প্রতিক বিশ্ব স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে প্রধান উপদেষ্টা দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন; একটি ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট এবং অন্যটি সামাজিক উদ্ভাবনে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতার ওপর আলোকপাত করে।