জাতীয় সক্ষমতা রক্ষায় মালয়েশিয়ায় আসছে সার্বভৌম এআই ক্লাউড

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:
মালয়েশিয়া সরকার জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সক্ষমতা রক্ষার লক্ষ্যে একটি সার্বভৌম এআই ক্লাউড প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, এ উদ্যোগ শুধু সরকারি পরিষেবা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে শক্তিশালী করবে না, বরং দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে একটি এআই-চালিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতেও সহায়তা করবে।

জাতীয় ডিজিটাল অর্থনীতি ও 4IR কাউন্সিলের বৈঠকে আনোয়ার ইব্রাহিম জোর দিয়ে বলেন, মাইডিজিটাল আইডির কার্যকর বাস্তবায়ন এবং মাইগভ মালয়েশিয়ার কার্যক্রমে সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বিত ভূমিকা অপরিহার্য। তার মতে, সার্বভৌম এআই ক্লাউড কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং এটি ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব রক্ষার একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

এ বৈঠকে জাতীয় কোয়ান্টাম নীতি অনুমোদন এবং একটি জাতীয় কোয়ান্টাম টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই টাস্ক ফোর্স তথাকথিত Q-Day হুমকি মোকাবিলা করবে, যখন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি বিদ্যমান এনক্রিপশন ভেঙে ডেটা সুরক্ষাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

মালয়েশিয়ার এ উদ্যোগ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বিশ্বের প্রযুক্তি শক্তিগুলো ইতিমধ্যেই সার্বভৌম এআই ক্লাউড এবং কোয়ান্টাম নিরাপত্তা নিয়ে বড় বিনিয়োগ করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন “GAIA-X” প্রকল্পের মাধ্যমে একটি ইউরোপীয় সার্বভৌম ক্লাউড গড়ে তুলছে, যাতে ডেটা সার্বভৌমত্ব ও এআই নিয়ন্ত্রণ ইউরোপের ভেতরে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে, বেসরকারি প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন মাইক্রোসফট, গুগল ও আমাজন এআই-কেন্দ্রিক ক্লাউড অবকাঠামোতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।

চীন তাদের “ডিজিটাল সিল্ক রোড” উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ক্লাউড ও এআই অবকাঠামো জোরদার করছে, যা বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রভাব বিস্তারে তাদের কৌশলগত হাতিয়ার।

সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যেই জাতীয় ডেটা সুরক্ষা এবং কোয়ান্টাম গবেষণায় অগ্রগামী। সিঙ্গাপুরের ইনফোকম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (IMDA) সার্বভৌম এআই এবং ডেটা প্রাইভেসি নিয়ে জাতীয় নীতিমালা চালু করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং আগামী দশকে প্রচলিত সাইবার নিরাপত্তার ধারণাকে পাল্টে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি (NIST) ইতিমধ্যে “পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি” মান নির্ধারণে কাজ করছে। ইউরোপ ও জাপানও একই ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মালয়েশিয়ার প্রস্তাবিত কোয়ান্টাম টাস্ক ফোর্স তাই সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল বর্তমানে দ্রুত ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হলেও সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতা এখানকার বড় চ্যালেঞ্জ।

ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব এখন শুধু প্রযুক্তিগত প্রশ্ন নয়, বরং এটি জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং ভূরাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়। মালয়েশিয়ার সার্বভৌম এআই ক্লাউড এবং কোয়ান্টাম নিরাপত্তা প্রস্তুতি প্রমাণ করে যে দেশটি শুধু প্রযুক্তি ব্যবহারকারী নয়, বরং প্রযুক্তি-নির্ভর ভবিষ্যতের সক্রিয় পরিকল্পনাকারী হতে চায়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সফল বাস্তবায়ন হলে এ উদ্যোগ মালয়েশিয়াকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ডিজিটাল নেতৃত্বের আসনে বসাতে পারে।

Share This Article