জাতীয় স্বার্থে প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় অন্তর্ভুক্তির আহ্বান

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

প্রতিবন্ধী নাগরিক অধিকার সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম জাতীয় স্বার্থে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, অধিকার সুরক্ষা এবং কর্মসংস্থানে সমান সুযোগ নিশ্চিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সংগঠনের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের জাতীয় সংবিধান ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আইন এবং জাতিসংঘের সিআরপিডি কনভেনশন স্পষ্টভাবে একটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের কথা বলে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাতেও (এসডিজি) উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সবার অন্তর্ভুক্তিকে অপরিহার্য ধরা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সিআরপিডি গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার-ভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশেও রাষ্ট্রের দায়িত্ব—প্রতিবন্ধী শিশু ও তরুণদের উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। কারণ তারা সমাজেরই অংশ এবং দেশের অগ্রযাত্রায় তাদের অবদান রাখার সুযোগ থাকা উচিত।

প্ল্যাটফর্ম জানায়, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে পাঁচ বিভাগে পরিচালিত ৭৬টি সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমে রিসোর্স শিক্ষক ও হাউজপ্যারেন্ট কাম শিক্ষকের প্রায় ১৪০টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। পাশাপাশি পাঁচটি সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে আরও ২০টির মতো শিক্ষক পদ খালি আছে।

এ অবস্থায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষা শেষ করা শতাধিক প্রতিবন্ধী তরুণ কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফলে অনেক পরিবারই তাদের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে।

২০১৯ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৪০০ জনের বেশি প্রতিবন্ধী প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগীরা আদালতে রিট করলে আদালত তাদের পক্ষে রায় দেন। 
কিন্তু সরকার ‘অক্ষমতা’ যুক্তি দেখিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে—যা প্রতিবন্ধী সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময় অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে বহু গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেসব উদাহরণ দেখিয়ে সংগঠনটি আশা প্রকাশ করে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার আপিল প্রত্যাহার এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের শূন্য পদে দ্রুত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের মাধ্যমে এই সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেবে।

সংগঠনের ভাষ্য, এটি করলে সরকারি কোষাগারের ওপর বড় ধরনের চাপ পড়বে না বরং উচ্চশিক্ষিত প্রতিবন্ধীরা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ পাবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। তাই মানবিক সংবেদনশীলতা, ন্যায়বিচার ও সাংবিধানিক অঙ্গীকার থেকে তাদের ন্যায্য দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি।

পরিশেষে প্ল্যাটফর্ম জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা, শূন্যপদে নিয়োগ, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সব দফতর, নীতিনির্ধারক ও সংস্থার প্রতি কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।

Share This Article