নাটোরের বাগাতিপাড়ার নূরপুর মালঞ্চি চকপাড়া এলাকায় সরকারি ভিপি জমি দখল করে ভূমিহীন পরিবারের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জামায়াত নেতা কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার কয়েকটি ভূমিহীন পরিবার বিপাকে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকালে বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন ওই গ্রামের শিখা বেগম। শিখা বেগম ওই এলাকার ইদ্রিস আলীর স্ত্রী।
শিখা বেগম বলেন, ‘আমরা ভূমিহীন মানুষ। সরকারের ভিপি জমির একাংশে আমাদের বসবাস। এই পথ দিয়েই আমরা বাজার, স্কুল ও হাসপাতাল যাতায়াত করি। কিন্তু এখন জামায়াত নেতা কামরুল ইসলাম বেআইনিভাবে জমি দখল করে কাঁটাতার দিয়েছেন। ফলে আমরা সমস্যায় পড়েছি।’
তিনি বলেন, কামরুল ইসলাম শুধু সরকারি জমি দখলই করেননি, তিনি এলাকায় ‘ফিলোন সমবায় সমিতি’ নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালিয়ে উচ্চ সুদের বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন। ওই অবৈধ অর্থের জোরেই এখন তিনি সরকারি জমি নিজের নামে দাবি করছেন।
শিখা বেগম অভিযোগ করে বলেন, কামরুলের অবৈধ অনেক টাকা, তাই এলাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
আমি গরিব মানুষ, সাহস করে মুখ খুলেছি জানি না আমার কী হবে। সে সরকারি জমি দখল করছে, আবার উল্টো জামায়াতের ক্ষমতা খাটিয়ে আমাদের নামে থানায় অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, দাগ নং ১৬০২ ও ১৬০৩ নম্বর সরকারি ভিপি জমি রাষ্ট্রের মালিকানাধীন এবং ভূমিহীন পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু প্রভাবশালী ওই জামায়াত নেতা অবৈধভাবে জমি ক্রয় দাবি করে সেখানে স্থায়ী প্রাচীর তুলতে উদ্যোগ নিয়েছেন।
তাদের অভিযোগ, প্রাচীর তুলায় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে।
শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরো বলেন, ভুক্তভোগীরা বহুবার স্থানীয়ভাবে সালিস ও আলোচনার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কামরুল ইসলাম কোনো সমঝোতায় আসেননি। বরং তিনি তাদের হুমকি, গালাগালি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
তারা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারি জমি অবৈধভাবে বিক্রি বা দখল হয়েছে কি না তা তদন্ত করা হোক, অবিলম্বে তাদের চলাচলের পথ খুলে দেওয়া হোক এবং অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কামরুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
আইন অনুযায়ী ‘ভিপি’ জমি রাষ্ট্রের মালিকানাধীন এবং এর মালিকানা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা যায় না। ‘শত্রু সম্পত্তি আইন ১৯৬৫’ ও পরবর্তী সংশোধনীগুলোর আওতায় এই ধরনের জমি বিক্রি, দখল বা দলিল করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ আফজাল রাজন বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে সার্ভেয়ার এবং ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এই জমির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বাগাতিপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা একেএম আফজাল হোসেন বলেন, আমরা সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সে যেই অন্যায় করুক না কেন, আমরা তার প্রতিবাদ করব।
তবে কামরুল ইসলাম বর্তমানে জামায়াতের কেউ নন বলে দাবি করেছেন দলটির নাটোর জেলা আমির ডক্টর মীর নুরুল ইসলাম।