জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের বিচার হবে: শফিকুল আলম

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার হবে বলে সাফ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আওয়ামী লীগের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা হত্যায় জাড়িত, যাদের হাতে রক্ত আছে, তাদের বিচার হবে। এখানে কোনও মাফ নেই।’

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি  এ কথ বলেন। ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে এ সময় তিনি জানান।

শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় যারা জড়িত, যার হাতে রক্ত আছে এবং যারা গুমের সঙ্গে জড়িত— আপনারা দেখেছেন গুম কমিশনের রিপোর্ট। কী ভয়াবহ ঘটনা। যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিলো, রাজনৈতিক দলের নেতা হোক, নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ হোক, যে-ই হোক তার বিচার হবে। এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন।’

রাজনৈতিক দল নির্বাচনের রোডম্যাপ জানতে চেয়েছে, সরকার এ ধরনের কোনও রোডম্যাপ ঘোষণা করবে কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমার তো মনে হয় স্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) নির্বাচনের সময়ের বিষয়টি আলোকপাত করেছেন। আর সত্যিকার অর্থে সঠিক তারিখ কী, তা নির্ভর করবে রিফর্মের ওপর। তিনি সময় একটা দিয়ে দিয়েছেন। যদি কম রিফর্ম হয়— তাহলে আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে হয়ে পারে। এর থেকে স্পষ্ট রোডম্যাপ আর কী হতে পারে। আপনারা প্রত্যাশা করতে পারেন যে, নির্বাচন হচ্ছে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে। এটা তো স্পষ্টতই রোডম্যাড। এখন যদি বলেন, নমিনেশন পেপারের ডেট কবে, সিডিউল… এটা তো নির্বাচন কমিশন দেবে।’

এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘সরকার মোটাদাগে নির্বাচনের সময়সীমা বলেছে। এ সময়ে মধ্যে থেকে নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে যে যে প্রয়োজনীয়তার কথা ইতোমধ্যে তা আলোচিত হয়েছে। এখনও আলোচনা হচ্ছে বা সামনে যে ইস্যুগুলো আসবে সেগুলো নিয়ে সরকার কীভাবে কাজ করবে— তার রূপরেখা, পদ্ধতির আউটলাইন প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেছেন।  নির্বাচনের সুনিদিষ্ট দিনক্ষণ, অর্থাৎ ভোট কবে হবে। কবে মনোনয়নপত্র দাখিল হবে— এগুলো নির্বাচন কমিশনের কাজ। সরকারের কাজ হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠু হয় এজন্য প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কারের জাতীয় দাবি রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে, দেশের মানুষের পক্ষ থেকেও একটা দাবি রয়েছে। আমাদের জুলাই বিপ্লবের স্প্রিটও এটা। আামাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোট দিতে পারেনি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে তরুণদের একটা দাবি রয়েছে, তারা যেন ভোট দিতে পারে। তাদের সবার নাগরিক অধিকার যেন নিশ্চিত হয়। সেই প্রত্যাশা বা দাবির আলোকে কিছু সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কয়েকটি কমিশন এরইমধ্যে তাদের রিপোর্টও দিয়েছে। বাকিগুলো সময়মতো রিপোর্ট দেবে বলে আশা করছি। এই রিপোর্টের পরে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির একটা উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করার প্রস্তাবও প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন। সংস্কারের বিষয়গুলোতে জাতীয় ঐক্যমত্য তৈরি হয়ে গেলে, তখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দিনক্ষণ জানিয়ে দিতে পারবে। এছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে যে প্রস্তুতি রয়েছে ইসি সেটা শুরু করে দিয়েছে। তারা সময় সময়ে গণমাধ্যমকে সেটা অবহিতও করছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ জানতে চাইলে ইসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলাদা আলাদা বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার কাকে গুরুত্ব দেবে এমন প্রশ্নে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সরকার সবাইকে গুরুত্ব দেবে। এখানে সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতি যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে পৌঁছাতে পারে। সে জন্য যেসব স্টেকহোল্ডার রয়েছে, তাদের সবার মতামত নিয়ে সম্মিলিতভাবে জাতির জন্য যা কল্যাণ হয়, সেরকম সিদ্ধান্ত সরকার নেবে।’

নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময় জানানো হয়েছে এতে পরিবর্তন আসতে পারে কিনা, জানতে চাইলে আজাদ মজুমদার বলেন, এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করার সময় আসেনি। যখন পরিস্থিতি তৈরি হবে তখন দেখা যাবে।’

আওয়ামী লীগের বিচারের পরে নির্বাচন, জাতীয় নাগরিক কমিটির এমন দাবি প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাম মজুমদার বলেন, ‘গত সরকারের অপকর্ম নিয়ে আদালতে মামলা আছে। অতীতে খুন-রাহাজানি ইত্যাদি অনেক বিষয় নিয়ে মামলা হয়েছে। এর বিচার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সেখান থেকে যদি কোন ওসিদ্ধান্ত আসে, জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের আলোচনায় যদি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব আসে, কিংবা আদালত থেকে কোনও নির্দেশনা আসে— সবগুলো বিষয় বিবেচনা করে সরকার যদি মনে করে তাহলে সিদ্ধান্ত নেবে।’

আওয়ামী লীগের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যদের দেশ ত্যাগের অভিযোগের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। অনেকগুলো বিষয় জানতেও পেরেছি। ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশে ছিলেন কী ছিলেন না, সেই প্রমাণ সরকারের হাতে নেই।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ছিল। এখানে মঞ্জুরি শব্দটা বাদ দিয়ে ‘বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন’ হবে। কারণ বাংলাদেশে অনেকগুলো পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যাতে আরও বৃহৎ আকারের কাজ করতে পারে। সর্বোচ্চ শিক্ষার মান যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয়, সেই কাজ বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন করবে।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আহম্মদ ফয়েজ উপস্থিত ছিলেন।

Share This Article