
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আট মাসের ধারাবাহিক বৈঠকের পর চূড়ান্ত করা হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে এর ভাষ্য দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে অধিকাংশ বিষয়ে একমত হয়েছে দলগুলো। কিছু বিষয়ে ভিন্নমত আবার কয়েকটিতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে একমত হয়েছে। সেসব মত-দ্বিমতের বিষয়গুলো রেখেই সনদ চূড়ান্ত করা হয়েছে; যেখানে কমিশনের পক্ষ থেকে কোনও আলাদা সুপারিশ নেই।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সেই সনদে স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর।
একমত হওয়া প্রস্তাবসমূহ
কমিশনের সনদে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদ প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার বিষয়ে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সবাই একমত হয়েছে; ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল করার বিষয়ে একমত বিএনপি ও জামায়াতসহ ৩১টি রাজনৈতিক দল এবং জোট; তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে একমত বিএনপি ও জামায়াতসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল; আপিল বিভাগ থেকে বিচারক নিয়োগে ৩০টি দল একমত। এ বিষয়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের পক্ষেও দলগুলো; জাতীয় সংসদে অর্থবিল ও আস্থা ভোট বাদে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার পক্ষে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি দল; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে সংবিধানের ধারায় পরিবর্তন আনার পক্ষে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট একমত। তবে এতে ৯টি রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে; রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতিতে বিএনপি ও জামায়াতসহ ২৯টি রাজনৈতিক দলই একমত।
এছড়া, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার বিধানের বিষয়েও অধিকাংশ দল একমত; বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট থাকলেও সুপ্রিম কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে একমত ২৯টি রাজনৈতিক দল; জাতীয় সংসদের নারী প্রতিনিধিত্ব পর্যায়ক্রমে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ সব দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে; স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে একমত ৩০টি দল; স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি গঠনেও দলগুলোতে মতৈক্য হয়েছে; গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কমিশন গঠনের প্রস্তাবে ৩২টি দল একমত।
যেসব ক্ষেত্রে ভিন্নমত
প্রধানমন্ত্রী একটি পদের বেশি থাকতে পারবেন না। এ প্রস্তাবে ২৫টি দল একমত হয়েছে। আর বাকি পাঁচটি দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। এ দলগুলো হলো-১২ দলীয় জোট, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (এনডিএম), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
সংবিধান বিলুপ্তি ও স্থগিত করার বিষয়ে ২৯টি রাজনৈতিক দল একমত হলেও ভিন্নমত গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদসহ তিনটি দলের।
সংসদের সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। উচ্চকক্ষে পিআরের পক্ষে জামায়াত এনসিপিসহ ২৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট। এতে ভিন্নমত বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দল ও জোটের।
সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা উল্লেখ থাকবে। যেখানে ধর্ম নিরপেক্ষতা কথাটি থাকবে না। তবে প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতসহ ২৭টি দল একমত হলেও গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী) ভিন্নমত পোষণ করেছে। তবে বিদ্যমান চার মূলনীতি ঠিক রেখে এ বিষয়গুলো যুক্ত করলে তাদের আপত্তি নেই।
সংবিধানের বর্তমান অনুচ্ছেদের সংশোধনপূর্বক ৭৭(১) এ যুক্ত করা হবে যে, এই সংবিধানের অধীনে একজন ন্যায়পাল থাকবেন। এতে ২৫টি দল একমত হলেও দ্বিমত পোষণ করেছে পাঁচটি দল। দলগুলো হলো– ১২ দলীয় জোট, আম জনতার দল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (এনডিএম), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।
জুলাই সনদে স্বাক্ষর পরবর্তী নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়নের বিষয়ে ২৭টি দল একমত হলেও তিনটি দ্বিমত। দলগুলো হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।