জুলাই সনদ নিয়ে আপত্তি-অভিযোগ

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

১৭ অক্টোবর জুলাই সনদে সই করেছে বড় রাজনৈতিক দলগুলো। তবে জুলাই আন্দালন থেকে গড়ে ওঠা দল এনসিপি এই সনদে সই করেনি, এমনকি অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন না দলটির শীর্ষ নেতারা। আবার নারী নেত্রীদের অভিযোগ, এই পুরো প্রক্রিয়ায় নারীকে স্পষ্ট অবজ্ঞা করা হয়েছে। এদিকে সনদ সই অনুষ্ঠানের আগে জুলাই যোদ্ধারা অনাস্থা জানিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন। পরবর্তীতে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ তাদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

জুলাই জাতীয় সনদ সই অনুষ্ঠানে অংশ নেন ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও সনদে সই করেন। তবে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও চারটি বাম দলসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা এতে অংশ নেননি।

এদিকে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল থেকেই জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের দাবিতে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে কয়েকশ মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হন। দুপুরে তারা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানের মঞ্চে প্রবেশ করে অতিথিদের আসনে বসে পড়েন। আয়োজক ও সংশ্লিষ্টরা তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। পরে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে জুলাই যোদ্ধাদের দাবির বিষয়ে আশ্বাস দেন এবং সনদের অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফার সংশোধিত ভাষ্য পড়ে শোনালে পরিস্থতি শান্ত হয়।

এই সনদে নারীর স্বর উহ্য রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নারী সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারী নেত্রী শিরিন হক। তিনি জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন। ফেসবুকে সে সময় তিনি লেখেন, ‘নারীর স্বরকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে যে সনদ তৈরি হলো তার প্রতি সম্মান রাখা কঠিন।’

কেন এ ধরনের মন্তব্য করলেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এই সনদের ওপর মন্তব্য করছি তা নয়, পুরো প্রক্রিয়ার তামাশা দেখে মন্তব্য করছি। এই প্রক্রিয়ায় এক-দুজন নারী ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। সেটা দেখে ভাবলাম কীভাবে ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পরে নারীদের অদৃশ্য করা হচ্ছে। অথচ এই আন্দালন শুরু হলো রোকেয়া হলের মেয়েদের মাঝরাতে তালা ভেঙে হল ছেড়ে বের হওয়ার মধ্য দিয়ে। কাল অনুষ্ঠানস্থলে দর্শকের সারিতে ছিলাম। বৃষ্টিতে ভিজে ভাবছিলাম মঞ্চে কারা উপস্থিত।’

শিরিন হক আরও বলেন, ‘নারীর বিষয়টা সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, অপরাধ, স্থানীয় সরকার, সংবিধান। আমরা যখন নারী সংস্কার কমিশনের কাজ করছিলাম তখন সবার সঙ্গে বসেছি, কিন্তু সংবিধান সংস্কার কমিশন আমাদের সময় দেয়নি। সেটার প্রধান যিনি ছিলেন তিনিই ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ছিলেন।’ 

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির কথা উল্লেখ করে শনিবার (১৮ অক্টোবর) নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই সনদে সই কেবলই আনুষ্ঠানিকতা, এটা আমরা আগেও বলেছি। যদি আইনি ভিত্তি না হয় তবে এর কোনও অর্থ তৈরি হবে না। ফলে আমরা এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেইনি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে তিন দলের জোটের যে রূপরেখা মনে আছে, সেই রাজনৈতিক সমঝোতা কিন্তু রক্ষা করা হয়নি। ফলে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে যেই দলগুলো আমাদের সঙ্গে ছিল তাদের প্রতি বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন নয়, বরং সংবিধানের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি আমরা পরিবর্তন করতে চাই, তার অবশ্যই একটি আইনি ভিত্তি প্রয়োজন।’

এই সনদ প্রক্রিয়ায় পুরোটা সময় যুক্ত থাকলেও শেষে এসে কেন অনাস্থা জানালো এনসিপি- প্রশ্নে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘এনসিপি জুলাই সনদকে স্রেফ রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল কিংবা ফাঁকা প্রতিশ্রুতি মনে করে না। এনসিপি মনে করে জুলাই সনদের প্রধানতম কাজ হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তি নির্মূল এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তর। এ কারণে এই সনদের সুস্পষ্ট আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি থাকতে হবে বলে এনসিপি মনে করে। এনসিপি বলেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের টেক্সট এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দেখার পর সনদে সই করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ ছাড়া সনদে সই করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। কারণ অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের করা প্রতিশ্রুতি নিজেরাই ভঙ্গ করেছে। কেবল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া না, গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। এবং সংস্কারকৃত সংবিধানের নাম হবে: বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬। এসব বিষয়ের নিশ্চয়তা ছাড়া সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত হবে বলে এনসিপি মনে করে না।’

Share This Article