
জুলাই সনদে সই দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, ‘তারা (জুলাই বিপ্লবীরা) প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল, বিশেষ করে সংবিধান; যেটিকে তারা ফ্যাসিবাদের মূল কারণ হিসেবে দেখেছিল। আমরা বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য আমরা একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছি। ত্রিশটিরও বেশি দল কয়েক মাস ধরে সংলাপে অংশ নিয়েছে। অবশেষে, সমস্ত পক্ষ একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছে এবং আমরা এই মাসে জুলাই সনদে সই করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটি আমাদের জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে।’
গতকাল শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সুইডেন ও নরওয়ের তরুণ পার্লামেন্টের যুব প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তরুণ রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিনিধিরা জুলাই অভ্যুত্থান, যুব অংশগ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘জুলাই একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল, বিশেষ করে অনেক তরুণী ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা এমন এক সময়ে এসেছেন যখন বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করি আপনারা আমাদের তরুণদের সঙ্গে দেখা করতে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে জানবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা সারা বিশ্বের তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাদের প্রত্যাশিত পৃথিবীর স্বপ্ন পূরণে তারা যেন কেবল বিদ্যমান বিশ্বের সঙ্গে খাইয়ে নেওয়ার জন্য লড়াই না করে। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য সাহসী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘মানুষ বলে তারুণ্যই ভবিষ্যৎ, আমি বলি তারুণ্যই বর্তমান। পৃথিবী দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং আজকের যুব সম্প্রদায় পূর্ববর্তী প্রজন্মের মতো নয়। আপনার বেড়ে ওঠা এবং প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার আপনাকে একটি ভিন্ন ধরনের মানুষ করে তোলে, প্রায় একজন অতিমানব। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো- নিজেকে জিজ্ঞাসা করা, আমি কী ধরনের পৃথিবী তৈরি করতে চাই? তারপরে এটির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোন, এটি বাস্তবায়িত করার জন্য আপনার কাছে উপকরণ রয়েছে।’
প্রতিনিধি দলে অ্যালিস ল্যান্ডারহোম (মধ্যপন্থী যুব পার্টি), আরিয়ান টোয়ানা (সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথ পার্টি), অ্যান্টন হোমলুন্ড (লিবারেল ইয়ুথ পার্টি), ডেক্সটার ক্রোকস্টেড (সুইডেন ডেমোক্র্যাটস ইয়ুথ), হান্না লিন্ডকভিস্ট (গ্রিন ইয়ুথ পার্টি), ম্যাক্স পেলিন (ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথ পার্টি) এবং ওডা রোহমে সিভার্টসেন (ইয়ং কনজারভেটিভস), লার্স মিকেল বার্স্টাড লোভোল্ড (প্রগ্রেস পার্টি ইয়ুথ) এবং নরওয়ে থেকে সিভার ক্লেভ কোলস্টাড (রেড ইয়ুথ)সহ সহ বিভিন্ন দলের তরুণ রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন ।
তাদের সঙ্গে ছিলেন ইউএনডিপির প্রতিনিধি স্টেফান লিলার (রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ, বাংলাদেশ), ক্যারোলিন অ্যাবার্গ (ডেপুটি ডিরেক্টর, নর্ডিক রিপ্রেজেন্টেশন অফিস), কির্তিজাই পাহারি (স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনস অ্যান্ড এক্সটার্নাল রিলেশনস স্পেশালিস্ট) এবং এমিলি আন্দ্রেসেন (কমিউনিকেশন অ্যানালিস্ট), সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস এবং নরওয়ের হকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন।
প্রধান উপদেষ্টা সফররত যুব নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষভাবে ঘুরে দেখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘এখানকার প্রতিটি রাস্তা এক একটি গল্প বলে। গ্রাফিতি, প্রাচীর শিল্প, লেখা যুব প্রতিরোধ এবং স্বপ্নের জীবন্ত জাদুঘর।’
বৈঠকে ড. ইউনূসের ‘থিওরি অব থ্রি জিরোস’ ধারণার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়, যার লক্ষ্য একটি নতুন সভ্যতা গড়ে তোলা।