কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মার্ক কার্নি। স্থানীয় সময় রোববার (৯ মার্চ) তার নাম ঘোষণা করেন লিবারেল পার্টির প্রেসিডেন্ট। কার্নি এমন এক সময়ে, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিচ্ছেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে।
গেল জানুয়ারিতে দলীয় বিরোধ এবং জনপ্রিয়তা হ্রাসের কারণে পদত্যাগ করেন জাস্টিন ট্রুডো। তার স্থলাভিষিক্ত হলেন কার্নি। কানাডায় আগামী ২০ অক্টোবরের আগে নিবার্চন হতে পারে। সে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন কার্নি।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক ব্যাংকার কার্নি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। রোববার সদস্যদের ভোটে দলটির নতুন নেতা বাছাই হয়। এতে ৮৬ শতাংশ ভোট পেয়ে লিবারেল নেতৃত্বের দৌড়ে জয়ী হয়েছেন মার্ক কার্নি। দলীয় প্রধানই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকেন।
কে এই মার্ক কার্নি?
উত্তর-পশ্চিম টেরিটরিজে জন্ম নেয়া এবং আলবার্টা প্রদেশে বেড়ে ওঠা কার্নি নিজেকে রাজনীতির বাইরের একজন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যিনি অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় কানাডাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে কানাডার অর্থনীতি বড় চাপে পড়েছে। নতুন শুল্কের কারণে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা কানাডীয় জাতীয়তাবাদী মনোভাবকে উসকে দিয়েছে এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্বের চাহিদা বাড়িয়েছে।
কার্নি হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসে এক দশকেরও বেশি সময় কাজ করেছেন।
তিনি ব্রুকফিল্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন, যেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনিয়োগের প্রচারণা চালিয়েছেন।
তবে, সংকটকালীন সময়ে ব্যাংকিং খাত পরিচালনার অভিজ্ঞতাকেই কার্নি ও তার সমর্থকেরা তার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হিসেবে তুলে ধরছেন।
২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় তিনি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন এবং তাৎক্ষণিক ও কার্যকর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কানাডাকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন।
২০১৩ সালে তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ২০২০ সালে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব
অর্থনৈতিক বিষয়ে তার দক্ষতা অস্বীকার করার মতো নয়, তবে নির্বাচনের রাজনীতিতে তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, যা অনেকের উদ্বেগের কারণ।
কার্নি এর আগে জাস্টিন ট্রুডোর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তবে, সরাসরি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ফলে, নেতৃত্বের দৌড়ে সাধারণ জনগণের কাছে নিজের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য তাকে অনেক বেশি প্রচারণা চালাতে হয়েছে।
বিশ্লেষক ড্যানিয়েল বেলান্ড বলেন, ‘কার্নি একজন পরামর্শক ছিলেন, কিন্তু সামনে তাকে রাজনীতির মূল মঞ্চে প্রবেশ করতে হবে।’
ট্রাম্পের হুমকি এবং নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ
বিশ্লেষকদের মতে, কানাডিয়ানরা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে। একটি জরিপ অনুসারে, ৪৩ শতাংশ কানাডিয়ান বিশ্বাস করেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে সম্পর্ক রক্ষায় কার্নি সবচেয়ে যোগ্য, যেখানে কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পয়েলিভ্রেকে ৩৪ শতাংশ মানুষ সমর্থন করেছেন।
কার্নি নিজেও পয়েলিভ্রেকে ‘ট্রাম্পের অনুসারী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, ‘তিনি ট্রাম্পের ভাষায় কথা বলেন, তার মতো আচরণ করেন। এই সংকটময় মুহূর্তে তিনি কানাডার জন্য সঠিক নেতা নন।’
অন্যদিকে, কনজারভেটিভরা বলছে, লিবারেলরা ট্রাম্পের শুল্ককে ইস্যু বানিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে।