জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ডজনখানেক বিশ্বনেতা।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার হোটেল স্যুইটে সাক্ষাৎ করতে বিশ্বনেতারা আসেন। এ সময় তারা প্রধান উপদেষ্টা এবং তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিজেদের পূর্ণ সমর্থন প্রদান করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ সময় বাংলাদেশকে তাদের দক্ষতা ও সহায়তা প্রদানের জন্য তারা নিজেদের আগ্রহের কথা জানান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, লাটভিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি ভায়রা ভেই-ফ্রেইবারগার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ভি-ফ্রিবারগা নিজামি গাঞ্জভি, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার (এনজিআইসি)-এর সহ-সভাপতি, যার নাম ১১তম শতাব্দীর বিখ্যাত ফার্সি কবির নামে, হাই-প্রোফাইল গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এছাড়া স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরুত পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাদি, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এমেরিটাস এবং বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপানড্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোজেন প্লেভনেলিভ ও পেটার স্টোয়ানভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট আইভো জোসিপোভিচ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্লাডেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম উপস্থিত ছিলেন।

আরও উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চার সাবেক প্রেসিডেন্ট, ইসমাইল সেরাগেলদিন, বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এনজিআইসির সহ-সভাপতি, কেরি কেনেডি, রবার্ট এফ এর প্রেসিডেন্ট, কেনেডি হিউম্যান রাইটস, এবং আইএইএ এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির সিনিয়র প্রতিনিধিরা।

বক্তারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রশংসা করেন। এক নেতা বলেন, ‘আমরা আপনাদের ও বাংলাদেশের মানুষকে সমর্থন করতে এসেছি। আমরা পুরোপুরি আপনার পেছনে আছি’।

নেতারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি স্বীকার করেন, পাশাপাশি ১৬ বছরের অপশাসন, দুর্নীতি ও শোষণের পর দেশ যে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা উল্লেখ করেন।

কেরি কেনেডি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে দেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার নিয়ে আপনি যে অগ্রগতি করেছেন তা অসাধারণ।

জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেলান ভারভার ঘোষণা করেন, ইনস্টিটিউট শিগগির বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমর্থন ঘোষণা করবে। ‘যদি আপনার আমাদের প্রয়োজন হয়, আমরা আপনার জন্য আছি,’ এনজিআইসি সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন।

প্রফেসর ইউনূস অপ্রতিরোধ্য সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণরূপে অপ্রত্যাশিত, আমাদের সমর্থনের জন্য আপনাকে এভাবে একত্রিত হতে দেখা এটা অবিশ্বাস্য। আমি সত্যিই অভিভূত।’

 তিনি বলেন, তিনি একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বেঁচে থাকার জন্য তার প্রশাসনের মুখোমুখি চ্যালেঞ্জগুলোর তুলনা করেন এভাবে: ‘এই দেশটি ১৫ বছর দীর্ঘ ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে গেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল’

তিনি জনসাধারণের প্রত্যাশা পরিচালনার চ্যালেঞ্জও উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও, মানুষ রাতারাতি অলৌকিক ঘটনা প্রত্যাশা করে। তবে আমাদের তরুণদের স্বপ্নও পূরণ করতে হবে। তারা খুঁজছে নতুন বাংলাদেশ।’

অধ্যাপক ইউনূস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানান আসন্ন সাধারণ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রফেসর ইউনূস বলেন, আমরা আপনার পথনির্দেশনা চাই। ‘আপনার পরামর্শ, সমর্থন, এবং নৈতিক শক্তি অমূল্য হবে।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ।