দল ছাড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা: হামলার ভয়ে অনেকে আত্মগোপনে

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

স্টাফ রিপোর্টার
খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস ছিলেন অনেক প্রভাবশালী নেতা। প্রায়ই যাতায়াত করতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের বাড়িতে। পকেটে থাকতো লাইসেন্স করা অস্ত্র। ক্ষমতার পালাবদলের পর গত ৫ আগস্ট চলে যান আত্মগোপন। পরে গত ২১ আগস্ট দলীয় পদ ছাড়ার পাশাপাশি জীবনে আর কোনোদিন রাজনীতি না করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

পাইকগাছা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার ইকবাল মন্টু ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজনৈতিক মাঠ থেকে তিনিও সটকে পড়েন। এ অবস্থায় গত ২৪ আগস্ট দলের সভাপতিসহ সাধারণ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন জ্যেষ্ঠ এ নেতা। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

শুধু এ দু’জনই নয়; খুলনায় তাদের মতো আরও বেশ কয়েকজন নেতা এরই মধ্যে দল ছেড়েছেন। আত্মগোপনে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরও অনেকেই। সরকার পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো নেতাকেই প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এলাকায় ফিরলে হামলা কিংবা গ্রেপ্তার হতে পারে এ শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস গত ৯ আগস্ট পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে দল ছেড়েছেন।

একইভাবে পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে দল ছাড়েন নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জামিরুল হুদা জহর ও পাইকগাছা পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল হক মিন্টু গত ৬ আগস্ট তাঁর ফেসবুকের দেয়ালে আর কোনোদিন রাজনীতি না করার ঘোষণা দেন। পরে অবশ্য তা মুছে দেন তিনি। তবে ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

পদত্যাগ করেছেন পাইকগাছার চাঁদখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুনছুর আলী গাজী। পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছি না। সেজন্য পদত্যাগ করেছি।

পদত্যাগের বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বুলু বিশ্বাস বলেন, আমি জীবনে আর কোনোদিন রাজনীতি করব না। রাজনীতি থেকে চিরদিনের জন্য অবসর নিয়েছি। আমাদের পরিবার ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমাদের পরিবারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাইরে আমি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের চার নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বা অন্যায় কাজ করেনি। সরকার পতনের পর আতঙ্কে সবাই আত্মগোপন করেছে। আপাতত এলাকায় ফিরে আসার মতো পরিস্থিতি নেই। সে কারণে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছাড়ার চিন্তাভাবনা করছি।

এদিকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর বাড়ি, অফিস, ব্যক্তিগত কার্যালয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর হয়। বিক্ষুব্ধ লোকজন পিটিয়ে হত্যা করে কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহসীন রেজাকে। গত ৫ আগস্টের পর খুলনা জেলা ও নগরীর বিভিন্ন থানায় এক ডজনেরও বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সদ্য বিদায়ী ও বর্তমান বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ সব নেতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগপন্থি বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয়েছে। মামলা হওয়ায় গ্রেপ্তারের ভয়ে কেউই আর এলাকায় ফিরছেন না।

নগরীর শঙ্খ মার্কেট এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ লোকজন। এরপর থেকে কোনো নেতাকর্মী আর দলীয় কার্যালয়মুখী হননি।

Share This Article