দল বেঁধে চলা কিশোর’রা কেনো আতঙ্কের?

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

বর্তমান সময়ে বেশ কিছু ঘটনা আমাদের মনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তারমধ্যে সর্বশেষ সাভারের হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যা এবং নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালায় পরানোর ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যে শিক্ষকের স্থান পিতা-মাতার পরেই সেই শিক্ষকেই তাঁর নিজ ছাত্রের হাতে লাঞ্চিত হতে হয়েছে। এটিই মনে হয় সবচেয়ে বেশি হতাশা, লজ্জ্বা ও কষ্টের।

আমাদের সমাজে শিক্ষকরা বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী।  শিক্ষকরা জাতি গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। একজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করার মাধ্যমে শিক্ষক তাঁর দায়িত্ব পালন করে। শিক্ষক তাঁর শিক্ষাদানের মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থীর মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে নীতি-নৈতিকতায় পরিপূর্ণতা এনে একজন আদর্শ শিক্ষক সমাজের খারাপ দিকগুলো পরিবর্তনে একটি বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

সর্বক্ষেত্রে রাজনীতিকরণ শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে বাঁধাগ্রস্ত করছে। পারিবারিক শিক্ষার অভাব ও সামাজিক অনৈক্য ও শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের অন্যতম অন্তরায়। বর্তমানে সময়ে কিশোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। যাদের অধিকাংশই ক্ষমতা লিপ্সু। ক্ষমতার লোভে অনেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করতে চায়। যদিও মানবিক রাজনৈতিক চর্চাও রয়েছে অল্প সংখ্যক কিছু কিশোরদের মধ্যে। তবে আদর্শহীন ও মিথ্যা রাজনীতি প্রবণতাই বেশি লক্ষ্য করা যায়। যার প্রতিফলন ঘটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কতিপর বখাটে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষমতার প্রভাবের জানান দিতে অনেক সময় পিতৃতুল্য শিক্ষকের গায়েও হাত তুলে বসে। শিক্ষক কোনো ঘটনার কারণে শাসন করলে ছাত্র কর্তৃক শিক্ষককে করা হয় লাঞ্চিত। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসনের আওতায় আনা উচিত এতে হয়তো উক্ত ঘটনাগুলো কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। তা না হলে হয়ত আমরা নিয়মিতভাবেই এমন ঘটনার সম্মুখিন হতেই থাকবো। 

সারাদেশেই রাস্তা ঘাট ও পাড়া মহল্লায় দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং নামের উঠতি বয়সের স্কুল পড়ুয়া বখাটেরা। যাদের প্রত্যেকের বয়স আঠারো বছরের নিচে। এদের বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান ও স্কুলছাত্র। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারেরও লেখাপড়া না করা বখাটে ছেলে এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এদের সংশোধন করা যাচ্ছেনা। বিভিন্ন রাজনৈতিক অসাধু নেতারা নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধি হাসিলের জন্য এসব গ্যাং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার ফলে সেসব কিশোররা নিজেদের ক্ষমতার প্রভাব দেখায়। এদের পেছনের গডফাদার বা প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির কারণে এসব গ্যাং এর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না৷ এসব কিশোরদের মধ্যে রাজনীতির প্রবণতা অনেক বেশি।

এসব গ্যাং এর বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

ছাত্র রাজনীতির নামে দলীয় লেজুড়বৃত্তি, শক্তি প্রদর্শনের মহড়া, ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব অছাত্রদের হাতে তুলে দেয়া, কর্মসংস্থানের অভাব প্রভৃতি বিষয়গুলোও অন্যতম কারণ। তারা তাদের প্রয়োজনেই কিশোর গ্যাং’র সৃষ্টি করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত দ্রুততম সময়ে সারাদেশে কিশোর গ্যাং বন্ধে শক্ত প্রতিরোধ করার জোড়ালো উদ্যোগ নেওয়া। পরিবারকেও নিজ সন্তানের বিষয়ে আরোও বেশি সচেতন হতে হবে। তাহলেই হয়ত এসব ঘটনার প্রতিফলন বন্ধ সম্ভব।

শেখ রিফাদ মাহমুদ

উপদেষ্টা সদস্য, গ্লোবাল স্টুডেন্ট ফোরাম।

Share This Article