
সারা দেশের মতো পাবনায়ও সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চার দফা দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন। জেলার প্রায় সব সরকারি বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। বিষয়টির সমালোচনা করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘শিক্ষকরা দাবি আদায়ে শিশুদের জিম্মি করেছেন। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এভাবে আন্দোলন করা অন্যায়।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চার দফা দাবিতে দেশের সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে সোমবার শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের ফলে বার্ষিক পরীক্ষার অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরাও। তারা বলছেন, শিক্ষকদের আকস্মিক এই কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের আবার ফিরে যেতে হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কঠোর আদেশ থাকলেও জেলার কোনও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা কক্ষে সহকারী শিক্ষকরা যাননি। প্রশাসন চিঠি দিয়েছে, সতর্ক করেছে কিন্তু মাঠে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, জেলা প্রাথমিত শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন। আর এ অচল অবস্থার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী শিশুরাই।
সকালে ভাঙ্গুড়া উপজেলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক একা একা পরীক্ষা কক্ষে ছোটাছুটি করছেন। সহকারী শিক্ষকরা সবাই অফিস রুমে বসে আছেন। একই চিত্র দেখা গেছে, ফরিদপুর বনওয়ারী নগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানেও প্রধান শিক্ষক একাই পরীক্ষা নিচ্ছেন। তবে তার সহকারী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কয়েকজন কর্মচারী। এ ছাড়া সদর, সুজানগর, ঈশ্বরদী, চাটমোহর, বেড়া, সাথিয়া ও আটঘরিয়া উপজেলার সব বিদ্যালয়ে একই অবস্থা। শিক্ষকরা স্কুলে উপস্থিত থাকলেও পরীক্ষা কক্ষে নেই। প্রশাসনের নির্দেশ যেন তাদের কাছে নিছক কাগুজে ঘোষণা।
অভিভাবকরা বলছেন, বছরের শেষ সময়ে যখন শিশুদের বার্ষিক পরীক্ষার আনন্দে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকার কথা, তখন শিক্ষকদের এমন উদাসীনতা ও দায়িত্বহীন আচরণ তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। পরীক্ষার প্রহর গুনতে থাকা শিশুরা মানসিকভাবে প্রস্তুত। কিন্তু বিদ্যালয়ে সেই পরিবেশ নেই। নেই প্রয়োজনীয় সহায়তা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল কবীর বলেন, ‘এতদিন আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিমানযাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের মতো ঘটনা দেখেছি। কিন্তু এখন কোমলমতি শিশুদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি অন্যায়। সারা বছরের পরিশ্রমের বিপরীতে শিশুদের পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত করা দমনযোগ্য ও নিন্দনীয় আচরণ। পরীক্ষা বন্ধ হবে না। সকল অভিভাবককে সচেতন থাকতে হবে। তাদের সহযোগিতায় বার্ষিক পরীক্ষা ও সাময়িক মূল্যায়ন নির্ধারিত সময়মতো সম্পন্ন করা হবে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে। শিক্ষকদের চারটি দাবি হলো- ১. সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের’ গেজেট প্রকাশ। ২. বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা। ৩. সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া। ৪. ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের দুই থেকে তিনটি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।