দীর্ঘ বছর পর হতে যাচ্ছে ডাকসু নির্বাচন, ভোটগ্রহণ মঙ্গলবার

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বইছে নির্বাচনী আমেজ। শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা গিয়েছে উৎসাহ ও উদ্দীপনা।

নির্বাচনের আগের দিন প্রচার প্রচারণা নিষেধাজ্ঞা থাকায় কর্মসূচি না থাকলেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। এদিকে সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিতে মরিয়া শিক্ষার্থীরা
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ছিল প্রচারণার শেষ দিন। এদিনও সব প্রার্থীর নজর ছিল নারী ভোটারদের নজর কাড়ার দিকে। ডাকসুতে এবার মোট ভোটারের ৪৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছাত্রী। ফলে বড় পদগুলোর প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন ছাত্রীরাই।

ডাকসুতে এবার মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯, যা মোট ভোটারের ৪৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ছাত্রীদের পাঁচটি আবাসিক হলের মধ্যে শুধু রোকেয়া হলেই পাঁচ হাজার ৬৬৫ ভোট। এ ছাড়া বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে দুই হাজার ১১০টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে দুই হাজার ৬৪৫, শামসুন নাহার হলে চার হাজার ৯৬ এবং কবি সুফিয়া কামাল হলে ভোটার চার হাজার ৪৪৩টি।
ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণায় প্রথম থেকেই গুরুত্ব পায় নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা। নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন সব প্যানেলের প্রার্থীরা। একই সঙ্গে নারীরা যাতে সাইবার বুলিংয়ের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করার কথাও বলছেন সবাই।

ছাত্রদলের প্যানেলের ইশতেহারে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি হলে স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট, মেডিকেল সেন্টারে নারী চিকিৎসক, সান্ধ্য আইন বিলোপ ও পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ৩৬ দফা ইশতেহারে সাতটিতে নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বাগছাসের প্যানেলের ইশতেহারে নারীদের হলগুলোতে খেলাধুলার সুযোগ বৃদ্ধি, ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, মেয়েদের নামাজের স্থান সম্প্রসারণ, অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, জনপরিসর নারীবান্ধব করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

উমামা-সাদী প্যানেল তাদের ইশতেহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেল কার্যকর করা, আইনি সহায়তা সেল গঠন, সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠন, অনলাইন-অফলাইনে নিপীড়ন বা বুলিংয়ের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিরোধ পর্ষদের প্যানেলের ইশতেহারে নারীবান্ধব ক্যাম্পাস তৈরিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি আছে।
বিভিন্ন প্যানেল যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তা পর্যালোচনাও করছেন ছাত্রীরা। তারা বলছেন, যাদের ভোট দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপদ হবে, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে এবং সংঘাত কমবে–এমন প্রার্থীদের তারা বেছে নেবেন। পাশাপাশি নিরাপদ ক্যাম্পাস, মতপ্রকাশ ও পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ছাত্রীদের বড় চাওয়া।

নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রীদের ভোট বেশি পাবেন কে, কোন হলের ভোট কার পক্ষে যাবে, কার দিকে ঝুঁকবেন জগন্নাথ হলের বিপুল সংখ্যক ভোটার– এমন নানা আলোচনার ফাঁকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিংয়ে পড়ান এমন প্রার্থীরা। বিশেষ করে ভিপি পদে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের সমীকরণ মেলাতে ‘কোচিং ফ্যাক্টর’ সামনে আসছে।
গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান নির্বাচন কমিশনের-

কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন। রোববার বিকেলে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, গুজব মারাত্মক ব্যাধি। শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, নির্ভয়ে ক্যাম্পাসে এসে যাতে ভোট দিয়ে তাদের নেতৃত্ব ঠিক করে নেন।
অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, আগে আট কেন্দ্রে ৭১০ বুথ ছিল। সেটি বাড়িয়ে ৮১০টি করা হয়েছে। যাতে আবাসিক, অনাবাসিক ভোটারদের কোনোভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হতে না হয়।

Share This Article