স্টাফ রিপোর্টার।।
খুলনা মহানগর বিএনপির কমিটিকে বিতর্কিত কমিটি উল্লেখ করে পদত্যাগ করেছিলেন বিএনপি নেতা আরিফুর রহমান মিঠু। বিএনপি ছেড়ে হাসিনা সরকারের গুণকীর্তন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইদের সাথে গড়ে তোলে সু-সর্ম্পক। প্রতিদিন যাতায়াত করতেন নগরীর শেরে বাংলা রোডস্থ শেখ বাড়িতে। নিজের অতীত (বিএনপির সাথে ঘনিষ্টতা) পুরোটাই মুছে ফেলে বাবা এস এম এ রবের পরিচয়ে হয়ে ওঠেন শেখ পরিবারের আস্থাভাজন। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। শেখ পরিবারের সহায়তায় ব্যাংক লোন নিয়ে গড়ে তোলেন আরাফাত গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। নিজেই ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পরাজয়ের পর ভোল্ট পাল্টে আবারো নিজেকে বিএনপির নেতা পরিচয়ে সরব হয়ে উঠেছেন মিঠু। খুলনা চেম্বর অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি দখলের জন্য চেম্বার ভবনে গিয়েছিলেন তিনি। তিনদিন আগে করেন সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সুর পাল্টে বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও রেখে গেছে তারই পৃষ্ঠপোষকতায় পালিত মানুষরূপী কিছু দানবদের। তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চেম্বারের নতুন এডহক কমিটি গঠনের দাবি করেন। এই দাবি করেই তিনি পড়েছেন বেকায়দায়।
এদিকে গত রবিবার (২৫ আগস্ট) জরুরী সভায় খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জবর দখলের প্রচেষ্টাকারীদের কঠোর হস্তে প্রতিরোধের আহবান জানিয়েছেন মহানগর বিএনপি। বেলা ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে খুলনা মহানগর বিএনপি’র জরুরি সভায় বিএনপি নেতারা দল থেকে পদত্যাগ করে পতিত আ’লীগ সরকারের পদলেহনকারী ব্যক্তিরা আবার মাথা চাড়া দিয়ে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন বলে উল্লেখ করেন। তারা অনুপ্রবেশকারীদের কঠোর হস্তে প্রতিরোধ এবং বিএনপি’র নাম ব্যবহারকারীদের সকল অপকর্মের উচিত জবাব দেয়ার হুশিয়ারি দেন। সভা থেকে বিএনপি নেতারা ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জবর দখলের পায়তারার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় তারা বলেন খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি কারা পরিচালনা করবে- সে সিদ্ধান্ত নিবেন খুলনার ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে বিএনপি’র নাম ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে খুলনা বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তা কঠোর হস্তে প্রতিহত করবেন।
অভিযোগের একাংশ: বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আরিফুর রহমান মিঠু নিজ অফিসে শেখ হেলাল, শেখ সোহেল আর শেখ জুয়েলের ছবি টানিয়ে জমি দখল, সরকারি খাল দখল, আরাফাত এলাকায় জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে জোর পুর্বক কমিশন আদায় ছিলো তার নিত্যদিনের ঘটনা। শুধু তাই নয় মৃত্যু ব্যক্তি জীবিত দেখিয়ে জমি বিক্রয়ের গুরুত্বর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তিনি শেখ হেলালকে চাচা, শেখ জুয়েল চাচা, শেখ সোহেল ভাই, শেখ রুবেল দোস্ত ও শেখ বাবু ভাই বলে পরিচয় দিতেন।
তারেক রহমানের নাম ব্যবহার: ৫ আগস্টের পর আরিফুর রহমান মিঠু বিভিন্ন লোককে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে ফোন দিয়েছে উল্লেখ করে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন। খুলনা সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা ফরিদ আহমেদ জানান, মিঠু তাকে ফোন দিয়ে বলেন তারেক রহমান তাকে (মিঠুকে) ফোন দিয়েছেন। ২১নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় দখল হচ্ছে এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ফরিদ আহমেদ আরো জানান, ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা যারপর নাই পরিশ্রম করে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। সেখান দল থেকে পদত্যাগ করে হঠাৎ নেতার দৌরাত্মে নেতাকর্মীরা বিব্রত হচ্ছেন।
যে কারনে পদত্যাগ করেন মিঠু: খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় খালিশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম আরিফুর রহমান মিঠু পদত্যাগ করেন। ২০২১ সালের (২৫ ডিসেম্বর শনিবার) সন্ধ্যায় তিনি পদত্যাগ করেন। মিঠু বিলুপ্ত মহানগর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। পদত্যাগ পত্রে আরিফুর রহমান মিঠু উল্লেখ করেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি, বিতর্কিত কমিটি ও দলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিছু নীতি নির্ধারকরা খুলনা বিএনপির ওপর অন্যায় করছেন তা মেনে নিতে পারছি না আমি। বিএনপির জন্য এত ত্যাগ করার পর সেই দল একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটি গঠন করবে তা ব্যক্তিগতভাবে আমি মেনে নিতে পারছি না। তাই পদত্যাগ করেছি। আমার পদত্যাগপত্র মহাসচিব বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, খালিশপুরে মিঠুর কর্মী-সমর্থকরাও দলের স্ব-স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
মিঠুর সংবাদ সম্মেলন: শনিবার (২৪ আগস্ট) খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মিঠু লিখিত বক্তৃতায় বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ও সেনাবাহিনীর সম্মিলিত প্রতিরোধে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় এবং দেশের ছাত্র-জনতার বিজয় অর্জিত হয়েছে। দেশ আজ স্বাধীন, জনতা আজ মুক্ত। হাজারো ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও রেখে গেছে তারই পৃষ্ঠপোষকতায় পালিত মানুষরূপী কিছু দানবকে। হাসিনার তৈরি করা এই দানবরা এখনও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা বিবেকবান ব্যবসায়ী সম্প্রদায় চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমরা আমাদের সন্তানদের পরাজিত হতে দেখতে পারি না। ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসিনার দানবেরা শত শত অফিস, ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে আগুন সন্ত্রাস, লুটপাট এবং চাঁদাবাজির মতো অসংখ্য অপরাধের মাধ্যমে ছাত-জনতান অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ ও বিতর্কিত করারর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের খুলনার ব্যবসায়ীরা রেহাই পায়নি। এখনও আমাদের ব্যবসায়ীদের ওপর নানাভাবে গোপনে চাঁদবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। এরসঙ্গে চলছে ব্যাংকগুলোর কাবলীওয়ালা চরিত্র। যেখানে ব্যবসায়ীরা এই চরম সঙ্কটের ভেতর দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য চলমান রাখছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে ওই সুদে মহাজন ব্যাংকগুলো কাবলীওয়ালার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বা আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ ’৭১-এর স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ব্যবসায়ী সমাজ এই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও উন্নয়নে এবং দেশের সুনাম, খ্যাতি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। খুলনার ব্যবসায়ী সমাজ এই কঠিন মুহূর্তে পাশে চেয়েছিলেন খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে। আরিফুর রহমান মিঠু আরো বলেন দুঃখের বিষয় গত ১৫টি বছর হাসিনার তৈরি করা মানবরুপী রক্তচোষা দানব বর্তমান খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ও নগর আ’লীগের প্রথম সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক ও তার দোষররা টু শব্দটি করেনি। খুলনার সাধারণ মানুষের প্রাণের নেতাদের হত্যার মূলপরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতা কাজী আমিনুল হক ১৫টি বছর ধরে খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতিকে তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান, শেখ পরিবারের, আ’লীগের দলীয় কার্যালয় এবং খুলনার চিহ্নিত খুনি-সন্তাসীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে তৈরি করেছে। ব্যবসায়ীদের প্রাণের সংগঠনকে কখনও ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহার করেনি এবং বার্ষিক আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাবও ব্যবসায়ীরা জানেন না। ছাত্র-জনতার প্রতিষ্ঠত এই নতুন সরকারের কাছে খুলনার সকল ব্যবসায়ীরা আজ কাজী আমিনুল হকের সকল অন্যায়ের বিচার দাবি করছে এবং সমিতির বিগত ১৫ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব সঠিক তদন্ত করে ব্যবসীয়দের কাছে প্রকাশ করতে হবে। এর পাশাপাশি কাজী আমিনুল হক ও তার দোষরদের তৈরি করা খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির পাতানো কমিটি ভেঙে প্রকৃত সকল সদস্যদের মতামতের মাধ্যমে নতুন এডহক কমিটি গঠণের জন্য সকল ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজী আমিনুল হকে নিজস্ব কোনো শিল্প নেই। তিনি বুঝবেন কিভাবে একজন শিল্পপতির ব্যবসার ধরন কি? গত ১৫ বছরে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের শিকার। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা শত কোটি টাকার সম্পদের বিপরীতে মাত্র ১০ কোটি টাকার ঋণ নিতে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে বেনামে একাউন্ট খুলে মর্গেজ ছাড়াই হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ করলে বিগত দিনে আমাদের ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজ ট্যাগ লাগিয়ে দেয়। কিছু ব্যাংকের অ
সাধু কর্মকর্তা সুদ ও ঘুষ খেতে খেতে এখন সুদে মহাজনে পরিণত হয়েছে। তিনি এই সঙ্কট মুহূর্তে খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির নতুন এডহক কমিটি গঠন করে সকল অনিয়মের সঠিক তদন্ত করে বিচার এবং ব্যাংকগুলোর কাবলীওয়ালা ভূমিকার পরিহারের দাবি জানান।