দূর্নীতিগ্রস্ত রবিনহুড পেট ক্লিনিক, চার ডাক্তারের পদত্যাগ

স্টাফ রিপোর্টার

স্টাফ রিপোর্টারঃ

দূর্নীতিতে অভিযুক্ত ও ডাক্তারদের অসম্মান করায় সাম্প্রতি দেশের অন্যতম বেসরকারি পশু-পাখি সহ পোষা প্রানীর হাসপাতাল “রবিনহুড কেয়ার এনিমেল ক্লিনিক” থেকে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন একসাথে চার জন ডাক্তার।

সেখান থেকে স্বদিচ্ছায় পদত্যাগ করা ডাক্তারগণ অভিযোগে লিখেন, ‘একসাথে চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি। চাকরি ছাড়ার অনেক কারণ ছিল।
যেমনঃ
১. ডাক্তারদের বাজে ভাষায় গালাগালি করে যা মুখে বলাও সম্ভব না। কিছু বললে বলে যে আমি তো মজা করে হাসতে হাসতে গালি দিয়েছি।
২.ডাক্তারদের নামে মিথ্যা অপবাদ রটানো
৩.অতি অল্প টাকার ইঞ্জেকশন দিয়ে 200 থেকে 300 টাকা নেওয়া।
৪. ডাক্তারদের উপর চাপ দেয়া হতো পেশেন্ট আসলে তারা যেন বারবার আসে সেই ব্যবস্থা করি।
৫. মূলত পেট সেক্টরে যারা আসে তাদের উদ্দেশ্যই থাকে নিজের থেকে পেট ক্লিনিক করার। পূর্বে এখানে যারা ডাক্তার হিসেবে এসেছিল তারা বেশিরভাগই এখন পেট ক্লিনিক দিয়েছেন। তারা নাকি নেমক হারামি করেছে। তাদের দেখে নেবে। ক্লিনিক বন্ধ করে দেবে।
৬. বেতন দেওয়ার সময় ভিবিন্ন পায়তারা করে। যা বেতন তার চেয়ে কম দেয়। ইমোশনাললি ব্লাকমেইল করে। বেতন আটকে রাখে।
৭. একজনের গত মাসের বেতন এখনো দেয়নি। বলতেছে দেবে না।
৮. কেউ যদি তাদের অপব্যাবহার সহ্য না করে চলে যাওয়ার কথা বললে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখায়। তার নাকি সব সময় র‍্যাব পুলিশের সাথে উঠাবসা। তার বিরুদ্ধে গেলে বা তার বিরুদ্ধে কথা বললে নাকি ঢাকায় থাকা যাবেনা।
৯. আমরা কেউ যদি ক্লিনিক দেই সেটা নাকি বন্ধ করে দিবে। ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া নাকি তার জন্য এক মুহূর্তের কাজ। সে এটাও গর্ব করে বলে যে দেখো আমার ক্লিনিকে কোনো অনুমোদন নাই তারপরও কেউ আমার কিচ্ছু করতে পারবে না।
১০. যদি কোন ডাক্তার তার কথা না শুনে সে ক্ষেত্রে তার অতি পরিচিত কিছু পেশেন্ট আছে তাদেরকে দিয়ে ওই ডাক্তারকে বিপদে ফেলা নো হয়। পরবর্তীতে রবিনহুড নিজে এসে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করার নাটক করে। তখন ভয় দেখায় আর বলে যে দেখো আজ আমি না থাকলে তোমার কি হতো তাই আমি যা বলি তাই শোনো, আমি যেভাবে বলি এই ভাবে পেশেন্ট দেখো। সামান্য চেকআপের পেশেন্ট আসলেও আমাদের এক্সট্রা করে ইনজেকশন দেয়ানোর উপর চাপ দেওয়া হয়। যা ভেট হয়ে মানা সম্ভব না।
১১. এস এসসি পাশ করা স্টাফ দিয়ে ভেট দের অপমান করানো হয়।
আরো অনেক বিষয় আছে যা বলার বাহিরে। আমি ভেট হয়ে নিজে অপমানিত হতে চাই না আর আমার সামনে অন্য কোন ভেট কে অপমান করুক সেটাও চাইনা। তাই আপনারা যারা রবিনহুড এ যাবেন তারা ১০০ বার চিন্তা ভাবনা করে যাবেন। এখানে শুরুতে মধু মাখা মুখে কথা বলবে। কে এফ সি থেকে খাবার এনে খাওয়াবে। পরে সেই মুখ দিয়ে গালি ছাড়া কথা বের হবে না। আর এমন খাবার দেবে যা গলা দিয়ে নামবে না। পেট ক্লিনিক একটা সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিৎ।

পোষা প্রাণী নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসা আয়েশা আখতার নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, ‘রবিনহুড ক্লিনিক থেকে স্পেইং করানো পর কিছু ওষুধ দিয়েছে যেমন ট্রাইজন ভেট, মেগা সি এস্টা ভেট, কিটো এ ভেট ইত্যাদি। ট্রাইজন ভেট এর দাম রেখেছে ২৫০টাকা প্রতি টা যা ৩ টা লেগেছে ৭৫০ টাকা, মেগা-সি ওষুধের দাম রেখেছে ২০০ টাকা প্রতি দিন তাও আবার ০.৮ মিলি করে ৭ দিনে মোট ১৪০০ টাকা, এস্টা ভেট প্রতি দিন ০.৪ মিলি করে ১০০ টাকা করে ৭০০ টাকা, কিটো এ ভেট ০.৪ মিলি করে প্রতি দিন এর দাম রেখেছে ১৫০ টাকা করে ৭ দিনে ১০৫০ টাকা। পরে আমি জানতে পারলাম ট্রাইজন ভেট এর দাম ১৫০ টাকা, মেগা সি প্রতি এম্পুল যেখানে ৫ মিলি করে থাকে এর দাম ৬ টাকা, এস্টা ভেট ১০ মিলি এর দাম ১৫ টাকা , কিটো এ ভেট ১০ মিলি এর দাম ১১০ টাকা। ২৫০০ টাকা দিয়ে স্পেইং করানোর পর ৫০০ টাকার ওষুধের দাম ধরিয়ে দিলো প্রায় ৪০০০ টাকা। যা আগে কখনই বলে নি। পরে ডাক্তার দের সাথে কথা বললে তারা জানান যে টাকা পয়সার বিষয়ে তারা ডিল করে না। ডিল করে রবিন হুডের কর্মচারীরা।’

উল্লেখ্য, রবিনহুড পেট ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কর্মরত এপর্যন্ত অনেক জন ডাক্তারই একে একে পদত্যাগ করেছেন। এই প্রথম তাদের সকল প্রতিষ্ঠান থেকে একযোগে ডাক্তার হিসেবে কর্মরত সকল ভেটেরিনারিনারিয়ান একযোগে পদত্যাগ করলেন।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় রবিনহুড পেট ক্লিনিকের প্রধান কার্যালয়। বছর খানেক হবে আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং গত মাসের ১০ তারিখে চালু হয় নারায়ণগঞ্জের চাষারা যাত্রা শুরু করেছে রবিনহুডের আরেকটি শাখা ক্লিনিক। রবিনহুড কেয়ার – এনিমেল ক্লিনিকের মালিক আফজাল খান।

Share This Article