
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শেহবাজ শরিফ তিন দিনের সরকারি সফরে মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন। রোববার দিবাগত রাত ৯টা ৪৬ মিনিটে তার বিশেষ ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কমপ্লেক্স বুংগা রায়ায় অবতরণ করে। এ সময় মালয়েশিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী দাতুক ফাহমি ফাদজিল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান। এসময় শেহবাজ শরিফকে প্রদান করা হয় গার্ড অব অনার।
২৮ সদস্যের রয়্যাল মালয় রেজিমেন্টের একটি বিশেষ ব্যাটালিয়ন এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয়। সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইশাক দারসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী।
আজ পুত্রজায়ার পারদানা কমপ্লেক্সে প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম শেহবাজকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন। এরপর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, হালাল শিল্প, শিক্ষা, পর্যটন এবং প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়গুলো আলোচিত হবে। পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়েও মতবিনিময় করবেন তারা।
দুই নেতা পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (MoU) ও একটি প্রশিক্ষণ বিষয়ক নোট বিনিময় (EoN) প্রত্যক্ষ করবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পর্যটন, উচ্চশিক্ষা, হালাল সার্টিফিকেশন, দুর্নীতি দমন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়ন এবং কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ সহযোগিতা।
শেহবাজ শরিফ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর হাতে উর্দু ভাষায় অনূদিত আনোয়ার ইব্রাহিমের গ্রন্থ “SCRIPT: For a Better Malaysia”-এর একটি কপি তুলে দেবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন সেরি পারদানায় আনুষ্ঠানিক নৈশভোজের আয়োজন করা হবে।
সফরের অংশ হিসেবে দুই প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান-মালয়েশিয়া ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেবেন। এর মাধ্যমে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৫৭ সালে। ২০১৯ সালে এ সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮.০৭ বিলিয়ন রিঙ্গিত (১.৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা আগের বছরের তুলনায় ২৫.৫ শতাংশ বেশি। মালয়েশিয়া থেকে পাকিস্তানে প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো পামতেল, পেট্রোলিয়াম ও রাসায়নিক দ্রব্য; অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে মালয়েশিয়া আমদানি করে কৃষিপণ্য, টেক্সটাইল, পোশাক, জুতা এবং পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য।
মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের সম্পর্ক কেবল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতেও এ সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশই ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (OIC) সক্রিয় সদস্য এবং মুসলিম বিশ্বের নানা ইস্যুতে প্রায়শই সমমনা অবস্থান গ্রহণ করে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৌশলগত স্থানে অবস্থানরত মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র পাকিস্তানের সহযোগিতা তাই আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ও সমুদ্রপথের নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
এছাড়া চীন-উদ্যোগে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) এবং পাকিস্তানের করিডর প্রকল্প (CPEC)-এর সঙ্গে মালয়েশিয়ার সংযোগ ভবিষ্যতে দুই দেশের জন্য নতুন অর্থনৈতিক করিডর খুলে দিতে পারে। এর ফলে মালয়েশিয়া দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে, আর পাকিস্তান লাভ করবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে প্রবেশাধিকার।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এই সফর দুই দেশের মধ্যে আস্থা জোরদার করবে। একইসঙ্গে ইসলামিক অর্থনীতি, হালাল শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে যৌথ উদ্যোগ মালয়েশিয়া-পাকিস্তান সম্পর্ককে কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকেও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
ইউআরএল কপি করা হয়েছে